ঢাকা,শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বালুদস্যুদের সৃষ্ট চোরাবালিতে দু’শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বালুদস্যুরা নিয়মবহির্ভুতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সৃষ্ট গর্তের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাইছড়ি ছড়াখালে ঘটেছে এ ঘটনা। নিহত শিশু সাজিয়া জন্নাত (১০) ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রংমহল এলাকার ছরওয়ার আলম ড্রাইভারের মেয়ে ও অপরজন একই এলাকার নেজাম উদ্দিন ড্রাইভারের মেয়ে আসমাউল হুসনা (৯)। পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.নুরুল আমিন।

এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার পরপর চকরিয়া থানা পুলিশের এসআই (উপপরিদর্শক) প্রিয়লাল ঘোষ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই শিশুর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরে করেন। তবে ঘটনার বিষয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশ দাপনের নির্দেশ দেন চকরিয়া থানার ওসি মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।

স্থানীয় এলাকাবাসি ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, বিগত ৪-৫মাস আগে থেকে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকার নিকটবর্তী বগাইছড়ি ছড়াখাল থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এসব বালু সংশ্লিষ্টরা দোহাজারী থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ দিচ্ছেন বালুদস্যু সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

এলাকাবাসির দাবি, বড় বড় গর্ত খুড়ে বালু উত্তোলনের কারনে বগাইছড়ি ছড়াখালের বেশিরভাগ পয়েন্টে চোলাবালির গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ঘটনারদিন রোববার দুপুরে দুই শিশু সাজিয়া জন্নাত ও আসমাউল হুসনা ছড়াখালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এসময় পা পিছলে একজন পানিতে পড়ে যায়। অপর শিশু তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে সেও পানিতে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাইছড়ি ছড়াখাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে প্রশাসনের দপ্তরে অনেক আগে আবেদন করেছিলেন এলাকাবাসি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদারকি করতে স্থানীয় ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর বন্ধের বদলে উল্টো বালু উত্তোলনের মহোৎসব আরো বেড়ে যায়।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, শিশুনিহতের ওই ঘটনাস্থলের বালু পয়েন্ট থেকে বর্তমানে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও তারই আপন ভাতিজা মো: ইমরান। চলতি বছর নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্যে অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বরজমিনে তদন্ত করলে বালু উত্তোলনকারী মুল হুতাদের চিহিৃত করা যাবে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধূরী বলেন, নিহত দুই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় এবং পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারে থানায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা রুজু করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: