ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারে মৎস্য ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥   কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেছেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ইন্টার্নী চিকিৎসকরা কর্মবিরতির নামে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করার কোন সুযোগ তাদের নেই। তিনি বলেন, মুহুর্তে মুহুর্তে জনগণ আক্রান্ত হবে সেটা আমরা হতে দেবনা। মিথ্যি মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানী করবে সেটা হতে দেবনা। প্রয়োজনে সারাদিন সারা রাত জনগণের সাথে রাজপথে থাকবো। বৃৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১২ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমুলক মামলা প্রত্যাহার দাবীতে কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির আয়োজনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা কালে তিনি এসব কথা বলেন।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির আয়োজনে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বিক্ষোভ মিছিলটি কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসক কাযালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমুলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং কিশোর আনোয়ার হত্যা কান্ডের সুষ্টু তদন্ত দাবী করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষো সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, গত ৪ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নি ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার কারণে শহরের ১নং ওয়ার্ড সমিতিপাড়ার বাসিন্দা মো. আনোয়ার নামে এক কিশোর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরপর এলাকাবাসী ও স্বজনরা আনোয়ারকে দেখতে এবং কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি উসমান গণি টুলুসহ কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী হাসপাতালে ছুটে যান। জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নি ডাক্তাররা তাদের উপর উল্টো ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং চরম মানবাধিকার লঙ্গন করে তাদেরকে রুমের ভেতর টেনে হেচড়ে নিয়ে আটক রাখেন। এরপর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন এবং কিশোর আনোয়ারের মরদেহ নিয়ে আসেন। উভয় পক্ষের সৃষ্ট ভুলবুঝাবুঝির ঘটনা নিরসনে ওই রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক হয়।

তারা বলেন, একজন রোগী কিশোর আনোয়ারকে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ওই রাতেই অত্যন্ত গোপনে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহীন মো. আবদুর রহমান বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি উসমান গণি টুলুসহ নিরীহ মৎস্য ব্যবসায়ীদেরকে আসামী করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবাদ আর ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষও।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন সংগঠন, পেশাজীবি ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষসহ জেলার আপামর জনতা অংশ নেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে কক্সবাজার পৌর সভা মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, এধরনের মিথ্যা মামলা অত্যন্ত দুঃখ জনক। ঘটনার পর আমিই মৎস্য ব্যবসায়ী উসমান গণি টুলুসহ অন্যান্যদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি। কিন্তু তাদেরকেই এই মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। এধরনের মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, আজকে যাকে ১ নং আসামী করা হয়েছে, সেই উসমান গণি টুটুলই আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে (হাসপাতালে) পৌছেছি। আনোয়ারের লাশ আমি গ্রহণ করে নিয়ে এসেছি।

এর পর ডাক্তাররা মানববন্ধন করেছে, সেখানে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধি ও আমি গিয়েছি। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি। কিন্তু এর পরেও তারা আবার নতুন করে কর্মবিরতি করেন। এভাবে কর্মবিরতি করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা, আমাদের জীবন নিয়ে হুমকি এটা চলতে পারে না।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে বিপন্ন অবস্থা ফেলে মৃত্যু ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া কোন মতে কাম্য নয়। কোন সরকারী কর্মচারী কোন মতে মানববন্ধন করা দুরে কথা,কর্মবিরতি তারা পালন করতে পারেনা।

মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, এই সমাবেশ থেকে আমি আগামী দিনে সকল সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তাদেরকে হুশিয়ারী করে দিচ্ছি ‘মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করার কোন সুযোগ তাদের নেই’। সকল সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের আহবান জানান, মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য মানষিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন।

তিনি বলেন, আমরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি , মুহুর্তে মুহুর্তে জনগণ আক্রান্ত হবে সেটা আমরা হতে দেবনা। মিথ্যি মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানী করবে সেটা হতে দেবনা। প্রয়োজনে সারাদিন সারা রাত জনগণের সাথে রাজপথে থাকবো।

তিনি উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রশাসন আমাকে কথা দিয়েছে মামলাটা মিথ্যা হয়েছে, তদন্ত করে সেটা প্রত্যাহার করা হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির প্রতিষ্টাতা সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন, মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ আজাদ, কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সদস্য নাসির উদ্দিন বাচ্চু । সমাবেশ সঞ্চালনা করেন কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু।

নিহত আনোয়ারের পিতা জাফর আলম মাঝি বলেন, আমার সন্তান হত্যায় জড়িতদেও বিরুদ্ধে আমি আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছি। আমার ছেলে হত্যা কান্ডের সুষ্টু তদন্ত দাবী করছি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি মো. রফিক সওদাগর, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাক আহম্মদ ভুট্টো, কার্যকরী সদস্য কাজী বাদশা হোসেন, মো. সিদ্দিক, জেলা মৎস্যজীবি লীগের স-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, এড. রিদুয়ান আলী, মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা মো. রফিক, মো. আরিফ, রমজান আলী, মো. রশিদ সওদাগর, মো. হানিফ, আমির হোসেন সওদাগর, এশাদুল্লাহ সওদাগর, মুফিজুর রহমান, আবুল কালাম সওদাগর । সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করেন আমরা কক্সবাজারবাসী, নিরাপদ চিকিৎসা চাই ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষ।

পাঠকের মতামত: