ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ইয়াবার বিশাল হাঁট এখন উখিয়ায়!

ফারুক আহমদ, উখিয়া ::
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফের পর ইয়াবার বিশাল হাঁট এখন উখিয়ায়। সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন বানের পানির মত ইয়াবার চালান ঢুকছে উখিয়ায়। এসব বিশাল চালান সড়ক ও সাগর পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। ২০টি গ্রামে ইয়াবা পাচারের হাঁট বসলেও প্রশাসন রয়েছে অন্ধকারে। আর এসব ইয়াবার হাঁট পরিচালনা করার জন্য ১৫টিরও অধিক সিন্ডিকেট। টেকনাফে একের পর এক ইয়াবা কারবারী সিরিজ বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর উখিয়ায় সুকৌশলে এ ব্যবসার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে আসে। কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে রাষ্ট্রিয়ভাবে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করা ইয়াবা ব্যবসা দিন দিন চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে ও খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল কক্সবাজার র‌্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে উখিয়ার বালুখালী ঝুমেরছড়া হতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালানসহ ৩ জনকে আটক করে। আকটকৃতরা হলো বালুখালী এলাকার নুরুল আলমের ছেলে নুরুল আমিন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শফি আলমের ছেলে শহিদুল ইসলাম, মৃত জাহিদ আলমের ছেলে আবুল ফয়েজ। জব্দ হওয়া ইয়াবার মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর কমান্ডার মো: রুহুল আমিন।
এদিকে ৪ এপ্রিল পালংখালী সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান জব্দ করেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি ৫০ হাজার টাকা। ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আশরাফ উল্লাহ্ রনি জানান, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার একটি বিশাল চালান পালংখালী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে নৌকা ভর্তি ইয়াবার চালান জব্দ করতে সক্ষম হয়। গত ৫ এপ্রিল মেরিন ড্রাইভ সড়কের সোনারপাড়া রেজু ব্রীজ সংলগ্ন বিজিবি চেকপোস্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান আটক করে। এ ব্যাপারে উখিয়া থানায় পৃথক পৃথক মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের।
এক সময় উখিয়া-টেকনাফের মধ্যে ইয়াবা পাচারের শীর্ষ টার্নিং পয়েন্ট ছিল টেকনাফ। ঘটনা প্রবাহে ও কালের আবর্তে এখন ইয়াবার বাজার দখলে আসে উখিয়ায়। স্থানীয়রা জানান, গত মার্চ মাসে ১০২ জন শীর্ষ ইয়াবা কারবারী টেকনাফে আত্মসমর্পন করে। এছাড়াও বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সাথে পৃথক বন্দুক যুদ্ধে অর্ধশতাধিক ইয়াবা কারবারী নিহত হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই টেকনাফের বিভিন্ন ্এলাকায় ইয়াবার চালান উদ্ধার করতে গিয়ে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলছে।
অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টেকনাফে বন্দুক যুদ্ধে ইয়াবা কারবারীদের নিহতের মিছিল লম্বা হওয়ায় ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যরা কৌশল পাল্টিয়ে এখন উখিয়ায় চলে আসে। তাদের ইশারায় মিয়ানমার থেকে বিশাল বিশাল ইয়াবার চালান সাগর ও নদী পথ বেয়ে উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ছে।
উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মকবুল হোছাইন মিথুন ওয়াল ফেইজে এক স্ট্যাটাসে বলেন, চিহ্নিত গডফাদার প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা ও বিশাল ইয়াবার চালান দেশে পাচার করলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা করছে না। তিনি আরও বলেন, পুলিশ চাইলে টেকনাফের মত উখিয়াকেও মাদকমুক্ত ঘোষণা করতে পারত। রাজাপালং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল উদ্দিন সুজন বলেছেন, পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবার চালান আসলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে ইয়াবায় ভাসছে উখিয়া।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, পালংখালী, আঞ্জুমান পাড়া, ফারিরবিল, থাইংখালী, রহমতের বিল, তেলখোলা, ধামনখালী, বালুখালী, ঝুমেরছড়া, টিভি টাওয়ার, কুতুপালং, হাজিরপাড়া, মৌলভী পাড়া, সিকদার বিল, ডেইলপাড়া, ফলিয়াপাড়া, টাইপালং, দরগাহবির, হাতিমোড়া, হিজলিয়া, জাদিমোড়া, হরিণমারা, তুতুরবিল, কোটবাজার, রতœাপালং, রুহুল্লারডেবা, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, ভালুকিয়া,তুলাতলী, রুমখাঁ কোলালপাড়া, ক্লাশপাড়া, পাতাবাড়ি, মরিচ্যা, নলবনিয়া, গুরামিয়ার গ্যারেজ, পাগলিরবিল, জালিয়াপালং, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মনখালী, চোয়াংখালী, মাদারবনিয়াসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামে ইয়াবার হাঁট বসে। আর এসব অবৈধ হাঁটে ইয়াবা বিকিকিনি করার জন্য ৩ শতাধিক খুচরা ও পাইকারী মাদক সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের রয়েছে মিয়ানমারসহ সারা দেশে নেটওয়ার্ক।
সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত, উখিয়ার ৫০টি স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবার লেনদেন ও পাচারের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা জানে না। এমনকি ২০ জনের অধিক গডফাদার থাকলেও তাদেরকে প্রশাসন শনাক্ত করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ইয়াবা গডফাদারের মধ্যে সখ্যতা রয়েছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী টেকনাফে প্রতিদিন ইয়াবা কারবারীকে গ্রেফতার ও অভিযানকারে বন্দুকযুদ্ধে চিহ্নিত মাদক পাচারকারীরা নিহত হলেও উখিয়ার চিত্র তার উল্টো। এখানে অভিযান তো দূরের কথা ইয়াবা গডফাদারকে আরও সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়া হয়। মোটা অংকের লেনদেনের কারনে উখিয়ার ইয়াবা কারবারীরা নিরাপদে অবৈধ ব্যবসার হাঁট বসিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উখিয়া থানার অফিসার ইনজার্চ মো: আবুল খায়ের বলেন, মাদক অভিযানকালে বন্দুক যুদ্ধে ২ জন ইয়াবা কারবারী নিহত হয়। এছাড়াও ২ জন ইয়াবার গডফাদারকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: