ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় এনজিও কোস্ট ট্রাস্ট কর্তৃক প্রশ্নবিদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে জনমনে অসন্তোষ: তদন্তের দাবী

ফারুক আহমদ, উখিয়া ॥ 

উখিয়ায় প্রচন্ড খরা ও গ্রিস্ম মৌসুমে বৃক্ষ রোপন নামে এনজিও সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট প্রশ্নবিদ্ধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ঘটনা নিয়ে সচেতন জনমনে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত সংবাদ অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হলে সর্বমহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জোরালো দাবী উঠেছে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ দাতা সংস্থা থেকে কি পরিমাণ ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল।

উপজেলার বিশিষ্ট পরিবহন শ্রমিক নেতা ও রুমখাঁ মাতবর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছলিম উল্লাহ বাহাদুর, চৌধুরী পাড়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক জলিল আহমদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গ্রীস্ম মৌসুমে খাবার পানি তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এক কলসি পানি সংগ্রহ করে আনতে বহুদূর যেতে হয়। এমতাবস্থায়, বসত বাড়ির আঙ্গিনায় রোপনকৃত বিভিন্ন ফলজ চারা পানি দিয়ে বাঁচানো আকাশ কুসুম কল্পনা। জনপ্রতিনিধিরা জানান, এনজিও কোস্ট ট্রাস্ট কর্তৃক সরবরাহকৃত চারার ৯০ শতাংশই মারা যাবে।

মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার নামে দাতা সংস্থার অর্থ লুটপাট ও অপচয় করে যাচ্ছে বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলো। কর্মসূচী বাস্তবায়নের নামে লোক দেখানো হাতেগুনা কাজ করে এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের পকেট ভারী করে চলছে।

খরা মৌসুমে চারা বিতরণের নামে দাতা সংস্থার পুরো টাকা মাটি করে দিয়েছে এনজিও সংস্থা ‘কোস্টাল এসোসিয়েশন ফর সোস্যাল ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্ট’ (কোস্ট ট্রাস্ট)। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিমত, গেল মার্চ মাস যেখানে পানির জন্য উখিয়ার পুরো এলাকা হা হা কার করছে সেখানে বিতরণকৃত হাজার হাজার নারিকেল, আম, নীম ও রেইন ট্রি প্রজাতির চারা কিভাবে বাঁচানো যাবে তার কোন কূলকিনারা নেই। এনজিও সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট গ্রীস্ম মৌসুমে চারা বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা কেন অপচয় করল, তা তদন্ত করার জন্য দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ ডাম্পারভর্তি করে হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন ও রাজাপালং ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে কোস্ট ট্রাস্ট এসব চারা ক্রয় করে এ কর্মসূচি হাতে নেয়।

উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শরীফুল ইসলাম জানান, ফলজ, ঔষধি ও বনজ গাছের চারা রোপন উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন-জুলাই মাস। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে রসালো মাটিতে গাছের চারা রোপন করা হলে সহজে বাঁচানো সম্ভব। খরা মৌসুমে অর্থাৎ মার্চ মাসে যেহেতু গ্রীস্মকাল ওই সময়ে গাছের চারা রোপন করলেও পানির অভাবে বাঁচানো কঠিন হয়ে উঠে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের এ্যাসিস্টেন্ট এগ্রিকালচার অফিসার মো: লতিফুর রহমান জানান, বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে উখিয়ার পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়নে স্থানীয়দের মাঝে ৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারকে ২টি নারিকেল, ১টি আম, ১টি দেশিয় নীম ও ১টি রয়েল ট্রি গাছের চারা বিতরণ করা হয়।

উখিয়ার বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবী বলেন, গ্রীস্ম মৌসুমে যে কোন চারা রোপন করা সঠিক সময় নয়। কারণ, পানি দিতে না পারলে রোপনকৃত গাছের চারা মারা যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এদিকে বর্ষা মৌসুম বাদ দিয়ে গ্রীস্ম বা খরা মৌসুমে গাছের চারা বিতরণ ও রোপন কর্মসূচী সম্পর্কে জানার জন্য কোটবাজারস্থ কোস্ট ট্রাস্ট অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজেট ও ফিনেন্স অফিসার মো: আলী আব্বাস পুরো ঘটনাই অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কর্মসূচীই তারা বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু একই অফিসের ছাদের নিচে বসা এনজিও কোস্ট ট্রাস্টের এ্যাসিস্টেন্ট এগ্রিকালচার অফিসার মো: লতিফুর রহমানের সাথে পরবর্তীতে ফোনে আলাপ হলে চারা বিতরণের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বৃক্ষরোপন কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। প্রশ্ন উঠেছে, কোস্ট ট্রাস্ট এনজিও সংস্থা প্রথমে কেন এ কর্মসূচির কার্যক্রম গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল, এর হেতু কি?

সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা জানান, দু’ মাস পর বর্ষাকাল শুরু হবে। বর্ষাকালেই চারা রোপনের মোক্ষম সময়। কিন্তু এনজিও সংস্থা গ্রীস্মকালে চারা বিতরণের কর্মসূচি কেন হাতে নিয়েছে তা কারো বোধগম্য নহে। অনেকের অভিমত কেবল বিদেশি দাতা সংস্থার বরাদ্দকৃত অর্থ অপচয় করার জন্য ও দায়িত্বরত এনজিও কর্মকর্তার পকেট ভারী করতে অসময়ে চারা বিতরণ করছে। দায়িত্বহীন ও দায়সারাভাবে হাতে নেওয়া কর্মসূচির বিষয়টি খতিয়ে দেখার জরুরী হয়ে পড়েছে।

পাঠকের মতামত: