ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লবণ উৎপাদনের ধুম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

তীব্র রোদের পাশাপাশি আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় দেদার লবণ উৎপাদন হচ্ছে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের সাত উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। এসব উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চলছে লবণ উৎপাদনের ধুম।

তবে লবণ উৎপাদন মৌসুমের মোক্ষম সময়ে হঠাৎ করে প্রকৃতির বৈরি আচরণে কয়েকদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হন মাঠপর্যায়ের চাষিরা। গত একসপ্তাহ ধরে লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়াসহ ৭ উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে ব্যাহত হয় লবণ উৎপাদন। এই অবস্থায় কিছুটা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন এখানকার লক্ষাধিক চাষি। তবে বৈরি আবহাওয়া কেটে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসায় ফের পুরোদমে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। লবণ উৎপাদনও ভালো হওয়ায় হাসিও ফুটেছে চাষিদের মাঝে।

এদিকে গত কয়েক মৌসুমে দেশে চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন এবং সেই লবণ এখনো মাঠে মজুত থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্তে মাথায় হাত উঠছে চাষিদের। তাঁদের দাবি, দাম ঠিক রেখে লবণ চাষিদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া এবং বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন এখানকার চাষিরা।

জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েকদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে থমকে যায় চলতি মৌসুমে কক্সবাজার অঞ্চলের সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় লবণ উৎপাদন কার্যক্রম।

লবণ চাষিদের মতে, কয়েকদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল লবণমাঠ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।

লবণ চাষিরা চকরিয়া নিউজকে জানান, চলতি বছর লবণ মৌসুম শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রতিকানিতে ৮০ থেকে ১০০ মণ লবণ উৎপাদন করেন চাষিরা। বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে আবহাওয়া শুষ্ক ও স্বাভাবিক হওয়ায় বর্তমানে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন তাঁরা।

কক্সবাজার বিসিকের একাধিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বৈরি আবহাওয়ায় কয়েকদিন লবণ উৎপাদন ব্যাহত হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ গত বছরের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত বিপুল পরিমাণ লবণ এখনো মাঠে মজুদ রয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টিপাতে লবণ চাষিদের আর্থিকভাবে বড় অঙ্কের ক্ষতি হবে না। কারণ বৃষ্টিপাতের আগাম আভাস থাকায় মাঠের বেশির ভাগ চাষি উৎপাদিত লবণ নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আবার অনেকে মাঠের ভেতরে পলিথিন মুড়িয়ে উৎপাদিত লবণ সুরক্ষিত অবস্থায় নিয়ে রেখেছে। ফলে অল্প পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চলতিবছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে গেল ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৬০ হাজার একর জমিতে প্রায় ১২ লাখ ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে দেদার লবণ উৎপাদনে মাঠে কাজ করছেন চাষিরা। এ ছাড়া আরো দুই মাস মতো হাতে সময় থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এইসময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন চাষিরা।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘লবণ উৎপাদনের ধুম পড়েছে মাঠে মাঠে। ইতোমধ্যে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রার সিংহভাগ লবণ উৎপাদন হয়ে গেছে। তাই কোনোভাবেই লবণের ঘাটতি হবে না। হাতে থাকা সময়ের মধ্যে লবণ উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারে।’

তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিকানিতে ৮০ থেকে ১০০ মণ লবণ উৎপাদন করছেন চাষিরা। যা অন্য বছরের চাইতে আশাব্যঞ্জক।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে ভোক্তা ও শিল্প পর্যায়ে লবণের চাহিদা প্রচুর। সেই সঙ্গে মাঠপর্যায়ের চাষিরা ভালো দামও পাচ্ছেন। বাকি সময়ের মধ্যে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে দেশে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন হবে।’

পাঠকের মতামত: