ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রির ধুম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদী থেকে ড্রেজিংয়ের নামে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সরকারি টাকা বরাদ্দে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলেও কাজের নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন বর্তমানে চিরিঙ্গা সেতুর নীচ থেকে উত্তোলনকৃত বালু নিদিষ্ট পয়েন্টে মজুদ না রেখে বাহিরে অবৈধভাবে বিক্রি করে আসছে। ফলে বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি জনপদে নিবিঘেœ বেচাবিক্রি চলছে মাতামুহুরী নদীর বালু।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবৈধ বালু বাণিজ্যের কারনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীন উপজেলার অন্তত ১৫টি সরকারি বালু মহালে কয়েকমাস ধরে বালু বিক্রি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদাররা। এতে করে বালুমহাল ইজারা খাতে জেলা প্রশাসন ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন। সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হলেও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারনে পালন করছেন দর্শকের ভুমিকা।
জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা ফেরাতে পাউবোর পক্ষ থেকে প্রকল্পটি গ্রহন করেছে। বর্তমানে প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতুর পয়েন্ট থেকে উপরে-নীচের অংশ মিলিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু বর্তমানে প্রতিদিন একাধিক ডাম্পার ট্রাকে করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বালু বিক্রি করতে প্রশাসনের কোন ধরণের অনুমতি নেই। তারপরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ড্রেজিংয়ের নামে সরকারি টাকা খরচ করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও বেশির ভাগ বালু ফের পানির সাথে নদীতে নেমে যাচ্ছে। অপরদিকে তীর এলাকায় শক্তিশালী মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর একাধিক পয়েন্টে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের ফসলি জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসির অভিযোগ করে জানান, উত্তোলনকৃত বালু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রতিদিন ৫০-৬০টি ডাম্পার ট্রাকে করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু বিক্রি করে আসছে। ফলে বালু ভর্তি ভারী ট্রাক চলাচলের কারনে বর্তমানে বেতুয়াবাজার-বাঘগুজারা সড়ক ভেঙ্গে একাধিক খানা-খন্দেক ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনগনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীনে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫টি বালু মহাল রয়েছে। তারমধ্যে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে চারটি, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে তিনটি, পাগলিরবিলে একটি, ফুলছড়িতে একটি, ফাসিয়াখালীতে দুইটি ও কোনাখালীতে একটি। প্রতিবছর জেলা প্রশাসন এই ১৫টি বালু মহাল ইজারা দিয়ে কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেন। অনুরূপভাবে গতমাসে এসব বালু মহাল প্রায় তিন কোটি টাকায় নতুনভাবে ইজারা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
চকরিয়া উপজেলার একাধিক বালু মহালের ইজারদার অভিযোগ করেছেন, সরকারি টাকায় মাতামুহুরী নদীর ড্রেজিং করার বিষয়টি একটি ভাল উদ্যোগ। উত্তোলনকৃত বালু বাহিরে বিক্রি করার জন্য কার্যাদেশে কোন ধরণের নির্দেশনা না থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা অমান্য করে চলছেন। উল্টো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাকে করে উত্তোলনকৃত বালু বাহিরে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ অবস্থার কারনে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা বাঁধায় অবাদে বিক্রি করা হচ্ছে মাতামুহুরী নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু।
ভুক্তভোগী বালু মহাল ইজারদাররা দাবি করেছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বালু বাণিজ্যের কারনে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে এবছরও জেলা প্রশাসন কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনে বৈধ বালু মহাল ইজারাদাররা অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বালু বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: