ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় পরিবেশ আইন লঙ্গন করে এনাম মেম্বারের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির অভিযোগে গাড়ি জব্দ

চকরিয়া প্রতিনিধি ::
সরকারীভাবে পাহার কাটার ওপর সম্পুর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকার পরও আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে কাকারা ইউপি সদস্য এনাম মেম্বারের নেতৃত্বে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বার আউলিয়া নগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকায় পাহাড় কাটার সংবাদ প্রকাশের পর কিছুদিন পাহাড় কাটা বন্ধ রাখলেও পুনরায় রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি পাচারের চেষ্টাকালে ব্যবহৃত ডাম্পার গাড়ি জব্দ করেন চকরিয়া থানা পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক জানায়, ৩১ শে মার্চ দিবাগত রাত্রে অনুমানিক ১টার সময় রাতের আঁধারে সরকারী বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি পাচারের সময় চকরিয়া থানার নিয়মিত টহল পুলিশ এস আই অরুণ চাকমা দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বারআওলিয়া রাস্তার মাথা নামক স্থানে মাটি ভর্তি একটি ডাম্পার ট্রাক(পিকআপ) জব্দ করেন। এসময় ড্রাইভার-হেলপার পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এসময় ডাম্পার ট্রাকটি জব্দ করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদক সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এস আই অরুণ চাকমার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তুু সরজমিনে দেখা মেলে উক্ত জব্দকৃত গাড়িটি।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে উক্ত সংবাদ পরিবেশন করায় ২১শে ফেব্রুয়ারি ভূমিদস্যু এনাম মেম্বার বাহিনীর হামলায় আহত হন সংবাদ কর্মী নাজমুল সাঈদ সোহেল। চকরিয়ার উত্তর লক্ষ্যারচর নলবিলা বন বিট জেলার একমাত্র বিট কাম চেকপোস্ট। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার নলবিলা বনবিটের বার আউলিয়া নগরে স্কুলের পাশঘেসা পাহাড়ে মাটি কাটার মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য এনাম নামক এক সিন্ডিকেট। গত বছর ওই এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে কয়েক শ্রমিক আহত হয়।এ সময় ফায়ার সার্ভিস পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতায় মাটির ভেতর থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।বছরে ঘুরেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় মাটি পাচারকারী চক্র ও গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকায়।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত চলছে পাহাড় কাটা ও মাটি পাচারের কাজ। তাদের ক্ষমতার জোর আর দাম্ভিকতার কারণে ভয়ে সহজে কেহ মুখ খুলেছে না। একের পর এক বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ভেঙ্গে সরকারি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে চলছে বিভন্ন জায়গায়। এক কথায় জনসেবার নামে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড়ের কর্তনকৃত মাটি। উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মধ্যকার বার আউলিয়া নগর এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে তা ট্রাক ও মিনি ট্রাক যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাটি বোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলের কারনে কাচা গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে খানা খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় নিরাপদ সড়ক যোগাযোগে দূর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী।সুত্র মতে, দিনে ও রাতে সমান তালে বিভিন্ন লোকজনের বসত বাড়ির উচু পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব মাটি প্রতিনিয়ত অর্ধ ডজন ডাম্পার ট্রাক ( মিনি ট্রাক) দিয়ে পাচার করে যাচ্ছে মাটি পাচারকারী চক্র। কাটা পাহাড়ের মাটিগুলোও বিক্রি করে বিভিন্ন স্থানে বসত ভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাহার কেটে মাটি পাচারের ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে পাহাড় ধসের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে প্রতিবছর পাহাড়ের মাটি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে সাধারণ মানুষের বসতবাড়িতে প্রবেশ করছে। প্রশাসনের চাপে স্থানীয় মাটি দস্যুরা সাময়িক পাহাড় কাটা বন্ধ রাখলেও গত কয়েকমাস ধরে আবারও পুরোদমে পাহাড় কাটা শুরু করেছে।চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটার উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না। স্থানীয় প্রভাবশালী, ভুমিদস্যু এনাম মেম্বারের নেতৃত্বে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় পরিবেশের মারাত্মক হুমকি সহ জনজীবনে আতঙ্ক ও বিপন্ন মানুষের আর্তনাদে কেউই এগিয়ে আসছে না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কেউ।লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মধ্যকার বারআউলিয়া এলাকার পাশের সু-বিশাল পাহাড় কেটে দিনে ও রাতে সমান তালে ৫/৬টি ডাম্পার মিনি ট্রাকে করে দেদারছেই মাটি বিক্রি করে চলেছে। পাহাড় কাটার মুল হোতা প্রভাবশালী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার চেয়ারম্যান। নির্বিঘ্নে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে আসছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মোঃ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ইতিপূর্বে যারা পাহাড়ের মাটি কেটে পাচার করছেন তাদের স্বশরীরে ডেকে সতর্কীকরণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার কর্তৃক পাহাড় কাটার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারী সে যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: