ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় এলজিইডি প্রকৌশলীর নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ হরিলুট

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া ::

পেকুয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রদত্ত সরকারী প্রকল্প সমূহের কাজ নয়ছয় করে অর্থ হরিলুটের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে। উন্নয়ন কাজ তদারকিতে দায়িত্বশীল এ কর্মকর্তা ঠিকাদারদের সাথে গোপন আতাঁত করে নানা অনিয়ম চালিয়ে আসলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তাই এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পাঁচটি স্থানে সড়ক সংস্কার সহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এসব কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও যেনতেন কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। এতে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকায় ঠিকাদাররা নিম্নমানের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। নিম্নমানের উপকরণ ও নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ না করে সবগুলো কাজই সমাপ্তির পথে।আর এ উন্নয়নকাজ শেষ না হতে খুব অল্প সময়ে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন ব্যক্তিরা জানান, প্রকল্পের ফাইল সই করতে ঘুষ আদায়, টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারের নি¤œমানের কাজ অনুমোদন সহ প্রতি প্রকল্প থেকে কমিশন আদায় করেন পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম। তাই নি¤œমানের কাজ করে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ঠিকাদারেরা।

বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, গত পাঁচ বছর ধরে নানা কৌশলে উপজেলা প্রকৌশলীর চেয়ার আঁকড়ে ধরে রেখেছেন জাহেদুল আলম। এ কারণে মূলত ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তর। নানা অনিময়ের অভিযোগের পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে তিনি বরাবরই রয়ে যান পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলীর চেয়ারে। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা কেউ নিচ্ছে না বলেই সেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন তিনি। এছাড়া নিজের এসব অনিয়ম দুর্নীতি চালিয়ে যেতে সরকারী এ অফিসে নিজেই তৈরি করে রেখেছেন একটি শক্তিশালী সি-িকেট। তার যোগসাজসে এ সি-িকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। এনিয়ে সেবা প্রার্থী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ঘুষ আদায় করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা কাজে নয়ছয় করার সুযোগ পান। তাই এসব কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয়রা। সেই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ হয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন। ক্ষুণ¥ হচ্ছে সরকারের সম্মান। তাই অতি শীগ্রই ঘুষখোর এ কর্মকর্তার বদলির দাবী জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে যোগদান পরবর্তী আজ অবধি উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জাহেদুল আলম। প্রায় পাঁচ বছরের দীর্ঘ এ সময়ে তিনি শিকড় গেড়ে বসেছেন পেকুয়ায়। ডালপালা মেলেছেন অনিয়ম দুর্নীতির। এতে পেকুয়ায় যথাযথভাবে সাধিত হচ্ছে না সরকারী উন্নয়ন। উন্নয়নকাজের বরাদ্দের একটি অংশ চলে যাচ্ছে প্রকৌশলী জাহেদ ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন সি-িকেটের পকেটে।

এব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম বলেন, আমি কোন অনৈতিক সুবিধা কারও কাছ থেকে আদায় করিনা। তাই কোন ঠিকাদারকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমি সরকারী দায়িত্ব সততা এবং নিষ্ঠার সাথে যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা মোঃ ইফতেখার আলী বলেন, এমন অভিযোগ আমার কাছে এখনো আসেনি। তারপরেও এসব অভিযোগ আমি খতিয়ে দেখবো। সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: