ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারতলা ভবন নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্নীতি

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজারের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন চারতলা ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সরকারী শিডিউল অনুযায়ী কাজ করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাসেম এন্ড ব্রাদার্স। মাটির নিচে ৮৫ ফুট পাইল বসাতে গিয়ে ৭ থেকে ১০ ফুট ভেঙ্গে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের বক্তব্য, পাইল তৈরি সঠিক না হলে এবং নিয়ম অনুযায়ী মাটির নিচে পোতা নাহলে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের সঠিক নিয়ম না মানলেও কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা।

অভিযোগ ঊঠেছে, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নতুন চারতলা নির্মাণে তদারকীর দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৗশলী মোরশদ আলমকে ম্যানেজ করেই ঠিকাদারের লোকজন এ অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ওই প্রকৌশলী ‘ম্যনেজ’ হওয়ার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রকৌশলী কক্সবাজারে কর্মরত থাকার সুবাধে কোন হাসপাতালের ভবন নির্মাণ হলেও ঠিকাদারের লোকজনের সাথে অবৈধ সুবিধা নিয়ে সরকারী কাজ তদারকীতে চরম অবহেলার প্রদর্শনেরও অভিযোগ রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য জানা গেছে, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ১৪ কোটি টাকারও বেশি বাজেটের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ৪ তলা ভবনটি নির্মাণের জন্য গত এক দেড় বছর পূর্বে কার্যাদেশ পান চট্টগ্রামের কাসেম এন্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্টান নিজেরা কাজটি বাস্তবায়ন না করে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সাগর নামে এক ব্যক্তিকে কাজটি বিক্রি করে দিয়েছে। আর সাব কন্ট্রাকে চারতলা ভবনের কাজ করতে সীমামীন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে লোহাগাড়ার বাসিন্দা সাগর ও তার লোকজন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ৪ তলা নতুন ভবন নির্মাণ কাজের শুরুতে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিল। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগের নিয়ম অনুসরণ করে ৪ তলা ভবন নির্মাণের কর্ম তালিকায় মাটি পরীক্ষা করে ৪তলা ভবনের জন্য ৮৫ ফিট করে প্রায় দুইশটি পাইল বসানোর জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেন ভবন ডিজাইনার। তবে কাজের শুরুতে নিন্মমানের পাইল তৈরি করে তা মাটির নিচে বসানো হয়েছে। ভবনের পাইলিংয়ে প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৮ ঝুঁড়ি সিলেটি পাথর, নিয়ম ছিল ৫ ঝুঁড়ি পাথর, পাইলিংয়ে কাজে অধিকাংশ কাজে বাংলা বালি ব্যবহার করা হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজে বেশিরভাগ বাংলা বালু ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারী হাসপাতালের ভবন নির্মানে এসব অনিয়ম করায় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণে শিডিউল বহির্ভূত কাজ করলেও দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা ছিল নিরব।

পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর নতুন চারতলা ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন সাব কন্ট্রাকে কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার। শিডিউলে প্রতিটি ছাদে ৬ সুতার রড ব্যবহারের নির্দেশ থাকলেও রড দেওয়া হয়েছে ৫ সুতা বাংলা রড। প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৫ ঝুঁড়ি সিলেটি পাথর, ২ ঝুঁড়ি সিলেটি বালি, ১ ঝুঁড়ি বাংলা বালি ব্যাবহারের জন্য শিডিউলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তুু ঠিকাদারের নিযুক্ত সাব ঠিকাদারের লোকজন প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৬-৮টি ঝুঁড়ি পাথর, ১ঝুঁড়ি সিলেটি বালি ও ৪ ঝুঁড়ি লোকাল বালি ব্যবহার করা হয়েছে। চার তলা ভবনের প্রতিটি ছাদে শিডিউল অনুযায়ী রডের ব্যবহার করা হয়নি। ১-২ টন রড কম দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের নিচে ব্যাচ ভরাটে কাচরা বালি দেওয়ার জন্য শিডিউলে উল্লেখ থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাটি। এছাড়াও প্রতিটি ছাদ ঢালাইয়ে সাব কন্ট্রাকের ঠিকাদার শিডিউল অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করেনি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো: এমরান বলেন, সিডিউল ও ডিজাইন অনুযায়ী ভবনটির কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। যা এলাকাবাসী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কন্সট্রাকশন কাজে খুব খুশি। তিনি ভবনের নির্মাণ কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছেনা বলে দাবি করেছেন।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোরশেদ আলম জানান, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শিডিউল অনুযায়ী করা হয়েছে। কাজে তিনি সার্বক্ষণিক তদারকী করেছেন।

পাঠকের মতামত: