অনলাইন ডেস্ক :: বাংলাদেশের সামরিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বর্তমানে নারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৪০ জন। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেয়েরা তাঁদের মা-বাবার বুক গর্বে ভরে দিয়েছেন। সৈনিক পদেও যোগ দিচ্ছেন অনেক নারী। সামরিক বাহিনীর এসব নারী সদস্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন।
মধ্য আফ্রিকার গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ ডিআর কঙ্গোর আকাশে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার উড়িয়ে সেখানে শান্তি রক্ষায় সহায়তা দেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন দুই কৃতী নারী। সেনাবাহিনীতে সর্বোচ্চ মেজর জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করছেন মেডিক্যাল কোরের এক নারী কর্মকর্তা। ফাইটিং ফোর্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন চারজন। বিমানবাহিনীতে গত ১২ ডিসেম্বর একজন নারী পাইলট প্রশিক্ষণকালে সার্বিক বিষয়ে সেরা কৃতিত্বের জন্য সোর্ড অব অনার লাভ করেন।
বিমানবাহিনীতে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো নারী বৈমানিক নিয়োগ শেষে তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। গত বছর প্রশিক্ষণ শেষে বিমানবাহিনীতে প্রথম বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে পাইলট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুিফ।
আাাইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও নারীদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য উল্লেখযোগ্য। দেশে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনেও বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আধাসামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২০১৫ সাল থেকে নারী সৈনিক নিয়োগ দিয়ে আসছে।
আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা চিকিৎসকসহ প্রায় ৯০০। সর্বোচ্চ মেজর জেনারেল পদে কর্মরত একজন। তিনি হচ্ছেন ডা. সুসানে গীতি। নিয়মিত কোর্সের নারী কর্মকর্তাদের চারজন সর্বোচ্চ লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে কর্মরত। তাঁরা হলেন আর্টিলারির সানজিদা হোসেন, সৈয়দা নাজিয়া রায়হান ও ফারহানা আফরীন এবং ইঞ্জিনিয়ার্সের সারাহ আমির। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তাঁরা সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ও ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়মিত কোর্স বা ফাইটিং ফোর্সে বর্তমানে মোট নারী কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। মেডিক্যাল কোরে রয়েছেন ৫০০ জনের মতো। শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন ৪৭ জন।
বিমানবাহিনীতে নারী কর্মকর্তা ১৭৮ জন। সর্বোচ্চ উইং কমান্ডার পদে কর্মরত আছেন। তাঁদের মধ্যে জিডি পাইলট ১২ জন। এই বাহিনীর ১৬ জন কর্মকর্তা বর্তমানে শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।
নৌবাহিনীতে নারী কর্মকর্তা মোট ১৮৩ জন। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কমান্ডার পদে আছেন ১৩ জন। আর বিভিন্ন পদে নারী নাবিক রয়েছেন ৬০ জন।
বিজিবিতে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছেন ৪৩৮ জন নারী, যাঁরা কাজ করছেন আইসিপি, বিজিবি হাসপাতাল ও চেকপোস্টগুলোতে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে বিজিবির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী নারী সৈনিক নিয়োগ শুরু হয়। ওই বছর প্রথমবারের মতো ৯৭ জনকে নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছর পর্যন্ত ছয়টি নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে ৪৩৮ জন নারী সৈনিককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিজিবিতে। সর্বশেষ ৯৩তম নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে ভর্তি হওয়া ৫৪ জন নারী সৈনিক সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে মৌলিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
পুলিশ বাহিনীতে নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৭ জন। সর্বোচ্চ অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক পদে আছেন রওশন আরা বেগম। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে আছেন আমেনা বেগম ও আতিকা ইসলাম। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কর্মরত ১২৫ জন।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ আনসারের ৮১৬ সদস্যের দুটি নারী ব্যাটালিয়নও কাজ করে যাচ্ছে। এই বাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ২৬ জন। এর মধ্যে পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচজন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সিনিয়র রিপোর্টার ওমর ফারুক ও স্টাফ রিপোর্টার রেজোয়ান বিশ্বাস।] তথ্য সুত্র: কালের কন্ঠ
পাঠকের মতামত: