ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

২১ বছরেও চালু করা যায়নি পৌর বাস টার্মিনাল

বান্দরবান প্রতিনিধি ::

বান্দরবানে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণ সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন শহরটি। প্রভাবশালী মহলের অনীহায় শহরের হাফেজঘোণায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর বাস টার্মিনালটি দীর্ঘ ২১ বছরেও চালু করতে না পারাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
পৌরসভা ও উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে পর্যটন শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালে জেলা শহরের হাফেজঘোনায় চার একর জায়গার ওপর একটি পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আট বছর পর ২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খান এম ইব্রাহিম হোসেন অনাড়ম্বরভাবে টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের বারোটি বছর পরও বাস টার্মিনালটি চালু করা যায়নি প্রভাবশালী বাসমালিক শ্রমিকদের অনীহায়।

এদিকে টার্মিনালটি চালু না হওয়ায় টার্মিনালের টিকেট কাউন্টার, যাত্রী ছাউনিসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। রাস্তায় বসানো ইটও অনেকস্থান থেকে খুলে নিয়ে গেছে কারা যেন। অনেকস্থানে ইট ওঠে গিয়ে বিপজ্জনক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে টার্মিনালের টিকেট কাউন্টার, গণশৌচাগার, যাত্রীছাউনি এবং সড়কের সংস্কার’সহ বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কার করতে নতুনভাবে আরো প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। নতুন প্রকল্পের সংস্কার কাজ শেষে দু’বছর আগে পৌরবাস টার্মিনালটি পৌরসভার কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের
ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছিন আরাফাত।

হাফেজঘোনা পৌর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ভাসমান লোকেরা টিকেট কাউন্টার এবং যাত্রীছাউনি দখল করে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। এছাড়াও টার্মিনালের জমিদখল করে গড়ে ওঠেছে গাড়ির ওয়ার্কশপ এবং চায়ের দোকান’সহ বিভিন্ন স্থাপনা। স্টেশনের জমিতে কংক্রিট, পাথর এবং বালু মজুত রেখে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। এছাড়া রাতের বেলায় কাঠ বোঝাই ট্রাক এবং কিছু যাত্রীবাহী বাস পৌর বাস টার্মিনালে পাকিং করে রাখতে দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দার মোহাম্মদ মানিক, মো: কামাল’সহ অনেকে চকরিয়া নিউজকে জানান, দিনে- রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, সিএনজি এবং ব্যাটারিচালিত টমটম গাড়িগুলো পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কেরানিহাট সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। আবার গণপরিবহনগুলো রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এ সময় স্টেশনের প্রধান সড়কসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি রেখে চালকরা বাকবিতন্ডায়ও জড়িয়ে পড়ে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এসব ঘটনা। যত্রতত্র পার্কিং এবং যাত্রীবাহী বাসগুলো শহরের পৌরবাস টার্মিনাল ব্যবহার না করে রাস্তায় যাত্রী নামানোর কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন শহর বান্দরবান। প্রভাবশালী বাস মালিকদের বিরোধিতায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাস টার্মিনালটি চালু করা যাচ্ছে না অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবী চকরিয়া নিউজকে বলেন, শহরের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে বান্দবান পর্যটন শহরের সৌন্দর্য হারাচ্ছে, কথাটি মিথ্যা নয়। কিন্তু বাস মালিক-শ্রমিকরা পৌর বাস টার্মিনালে গাড়ী পার্কিং করছেনা। একাধিকবার বলার পরও তারা কথায় শুনছেন না। দ্রুত পৌর বাস টার্মিনালটি চালু করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা হবে। উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ কাজ শেষে বাস টার্মিনালটি পৌরসভার কাছে হস্থান্তর করেছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, পর্যটন শহরের নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে পুলিশ। শহরের যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং বন্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: