ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় লবণ চাষিদের মানববন্ধন ৫’শ টাকার লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ৫৫ হাজার লোক লবণ শিল্পের উপর নির্ভরশীল। যারা দেশের মানুষের লবণের চাহিদা মিটিয়ে জীবন-যাপন করে। ৬০ হাজার একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই শিল্প কক্সবাজারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ভাল নেই লবণ শিল্পের সাথে জড়িতরা। লাগামহীনভাবে লবণের দাম কমে যাওয়ায় খুবই ক্ষতিগ্রস্থ লবণচাষীরা।
লবণচাষীদের অভিযোগে জানা যায়, মন প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দামের লবণ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। এতে লাভ’ত দুরের কথা গুনতে হচ্ছে লোকসান। আর এই ক্ষতি’র জন্য তারা দায়ী করছেন অসাধু মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ও চাহিদা পূর্ন থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকে। এ অবস্থায় লবণ চাষী ও মালিকদের দাবী লবণের মূল্য আগের মতই রাখা হউক। যাতে করে লবণ শিল্প বেঁচে থাকে আর এই শিল্পের সাথে জড়িতরা রক্ষা পায়।
এরই দাবীতে রোববার সকালে পেকুয়ার মগনামার কাজী’র মার্কেট এলাকায় মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষি ও মালিকরা। তারা মানববন্ধনের মাধ্যমে লবণের ন্যায্যমূল্য পেতে প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছেন।
মগনামা ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি মো. বদিউল আলমের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ছয় শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত লবন চাষী ও মালিক অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দু রশিদ, ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার খোরশেদ আলম, আসাদ উদ্দিন সওদাগর, লবণ ব্যবসায়ী মহি উদ্দিন ও মাঈন উদ্দিনসহ এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি।
লবণ চাষী ও মালিকদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, বর্তমান সময়ে মাঠ থেকে উৎপাদিত লবণের দাম কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা। যা পক্রিয়া শেষে বাজারে বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। এক কানি বা ৪০ শতক জায়গায় লবণ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। কিন্তু লবণ চাষীরা পাচ্ছেন ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিমন লবণ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৩০০ টাকা। কিন্তু ওই লবন তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়।
তারা আরো জানায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মন প্রতি লবণের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। ২০১৮-২০১৯ সালে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে ১৭০ থেকে ১৬০ টাকায়। কিন্তু মাঠে মন প্রতি খরচ পড়ছে ৩০০ টাকা।
মন প্রতি ৫০০ টাকা থাকা লবণ ১৫০ টাকায় নেমে যাওয়ায় চাষীদের কষ্টের শেষ নেই। তার ঋণ পর্যন্ত শোধ করতে পারবেনা। এর জন্য তারা দায়ী করছেন পটিয়া ও নারায়নগঞ্জের কিছু অসাধু মিল মালিককে। যারা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ফেলেছে। আর চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও বেশি লাভের আশায় বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে দেশি লবণের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী জানান, আগের বছরের লবণের দামের উপর নির্ভর করে চাষিরা অগ্রিম টাকা নিয়ে লবণের মাঠ করছে। এই অবস্থায় যদি ৫০০ টাকার লবণ ১৭০ টাকা হয় তাহলে চাষীরা মজুরীর টাকা পর্যন্ত উঠবেনা। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর বাহির থেকে লবণ আমদানি না করায় দেশে লবণের দাম ভাল ছিল। চাষিরাও সন্তুষ্ঠ ছিল। কিন্তু চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও ভেট আর কর দিয়ে বিদেশ থেকে লবন আমদানি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় বিদেশী লবণের সাথে দেশি লবণ মিশিয়ে বিক্রি করছে। আর তারাই লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে চরম দূরাবস্থায় পড়েছে লবণ চাষী ও মালিকেরা।
সচেতন মহল বলছেন, কক্সবাজারের ৭ উপজেলা সহ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ৫৫ হাজার লোক লবন শিল্পকে বাচিঁয়ে রেখেছে। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ চাষ। তাই লবণ চাষী ও মালিকদের ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যেমে বাচিঁয়ে রাখতে হবে লবণ শিল্প।

পাঠকের মতামত: