ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

আত্মসমর্পণ’ : টেকনাফে চলছে মঞ্চ তৈরীর কাজ ও মাইকিং

টেকনাফ প্রতিনিধি  ::
১৬ ফেব্রæয়ারী টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে হচ্ছে বহুল আলোচিত দেড় শতাধিক ইয়াবা কারবারিদের ‘আত্মসমর্পণ’ অনুষ্টান। বর্তমানে মঞ্চ তৈরীর কাজ ও মাইকিং চলছে পুরো দমে। টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসে ইয়াবা ট্যাবলেট নামে মাদকটি। ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানও হবে এই টেকনাফে।
জানা যায়, শনিবার ১৬ ফেব্রæয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগের দিনই কক্সবাজারে পৌঁছাবেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল-২৪’র স্থানীয় সাংবাদিক আকরাম হোসাইনের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন ইয়াবা পাচারকারীদের একটা অংশ আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছে। এরই মধ্যে ইয়াবা চোরাকারবারিদের কাছে প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে লিখিতভাবে অবহিত করি। ১৫ ফেব্রæয়ারি সকালে বিমানে কক্সবাজার পৌঁছাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওইদিন বিকালে কক্সবাজারে জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরদিন সকালে তিনি টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যাবেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের সার্বিক প্রস্ততির তদারকিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বৃহস্পতিবার ১৪ ফেব্রæয়ারী কক্সবাজার আসছেন। গত বছরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা সর্বশেষ তালিকায় ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত ১ হাজার ১৫১ জন কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৩ জনকে। শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারিসহ তালিকায় থাকাদের বড় একটা অংশের বসবাস সীমান্তবর্তী টেকনাফ উপজেলায়। তাদের সবাই কমবেশি প্রভাবশালী, কেউ কেউ আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও। এরই মধ্যে দেড় শতাধিক তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত ইয়াবা চোরাকারবারি আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজারের বিশেষ একটি স্থানে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপদ হেফাজতে জড়ো হয়েছেন। আরও অনেকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবেন’।
তবে ঠিক কতজন আত্মসমর্পণের জন্য ‘নিরাপদ হেফাজতে’ এসেছেন এবং কী কী শর্তে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে, ‘কৌশলগত কারণে’ তা প্রকাশ করতে তিনি রাজি হননি।
বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেটের কথাই সবার আগে আসে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমার সরকারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানে কয়েকশ জন নিহত হলেও ইয়াবা কারবার বন্ধ করা যায়নি। এ অবস্থায় নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। এর মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক মেম্বার গত ১৫ জানুয়ারি ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানালে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়। চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি আকার পেতে শুরু করে।
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদিও। সরকারি সর্বশেষ হালনাগাদ করা তালিকায় কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির নাম ‘শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারি’ হিসেবে চিহ্নিত ৭৩ জনের মধ্যে ১ নম্বরে রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে এসেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতা বদির ৫ ভাই আব্দুর শুক্কুর, আব্দুল আমিন, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ সফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপু, আতœীয় শাহেদ কামাল ও ফুফাত ভাই কামরুল হাসান রাসেলের নামও ওই তালিকায় ছিল বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তবে বদি বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ##

পাঠকের মতামত: