ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্গনের অভিযোগ

Chakaria  Pictureনিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :::

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিরর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা আচরণ বিধি না মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে প্রার্থীদের পোস্টার সুঁতলিতে বেঁধে টাঙিয়ে দেওয়া ছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি, দেওয়াল, বিভিন্ন স্থাপনা পোস্টার আঁঠা দিয়ে লাগানো নির্বাচনী কমিশনের ঘোষিত আচরণ বিধি সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন হলেও এখানে তা মানছেন না প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে মেয়র প্রার্তীসহ সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। একইসঙ্গে মেয়র প্রার্থীদেরও পোস্টার একইভাবে সাঁটাতে দেখা গেছে। এছাড়া দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শব্দযন্ত্র দিয়ে প্রচারণার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হলেও ভোর থেকেই শুরু হয়ে গভীর রাত অবদি শব্দ দুষণের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পেড়েছে পৌরবাসী।
অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচন কমিশনের নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এনিয়ে কুম্ভকর্ণের ভূমিকায় রয়েছেন। গত ৫ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর পরই ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা। মেয়র পদের দুইজন ও কাউন্সিলর পদে অসংখ্য প্রার্থী বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। যা অনেকটা মিছিলের মতোও পরিলক্ষিত হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর ইতিমধ্যে তিনদিন পেরিয়ে গেলেও আচরণ বিধি লঙ্ঘদের দায়ে কোথাও কোন প্রার্থী বা তাদের কর্মীর বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা নিজেদের মতো করেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর শব্দদুষণসহ প্রার্থীদের নানা যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন পৌরবাসী।
Chotan-Chakaria-Pic.-07.03.16-300x229সরজমিন পৌরশহর চিরিঙ্গা ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, সুঁতলি দিয়ে নির্বাচনী পোস্টার টাঙানোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক খুঁটি, দেওয়াল, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় আঁঠা দিয়ে পোষ্টার লাগানো হচ্ছে দেদারছে। এমনকি উপজেলা পরিষদ ভবন, ভূমি অফিস, থানার দেওয়ালসহ সরকারী প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে দেওয়ালেও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের নির্বাচনী পোষ্টার আঁঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে। যা নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত আচরণ বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা চলমান রয়েছে। আবার সামনে সাময়িকসহ বিভিন্ন পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু ভোর থেকে গভীর রাত অবদি প্রচারযন্ত্রের (মাইক) শব্দদুষণের কারণে অতিষ্ট তারা। এই অবস্থায় পড়ালেখার কি হবে তা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।’
কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা দাবি করেন, ‘নির্বাচন আসলেই পোস্টার দেওয়ালে দেওয়ালে লাগানো হয়। যা আমরা ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি। তাছাড়া দেওয়াল বা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোস্টার লাগালে আচরণবিধি যে লঙ্ঘন হয় তা তাদের জানা নেই বা নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের এ ব্যাপারে নিষেধও করেনি।
নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি তো শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। সরকার দলের প্রার্থী তফসিল ঘোষণার পর পরই যেভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে শত শত মানুষ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন সেক্ষেত্রে আমি কিভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি তা সকলেই দেখছেন। এর পরও যাতে প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয় সেদিকেই বেশি খেয়াল রয়েছে আমার। তাছাড়া বিরোধী দলের প্রার্থী হওয়ায় আমার ওপর চাপাচাপিও একটু বেশি হবে, এটা আমি ভাল করে জানি বলেই আচরণ বিধি মেনেই প্রচারণা চালাচ্ছি।’ নির্বাচনী পোষ্টার দেওয়ালে লাগানো নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হায়দার আরো বলেন, ‘আমার কর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সুঁতলি বেঁধে টাঙিয়ে দেওয়ার জন্য। এর পরও দু-এক জায়গায় অতি উৎসাহি কর্মীরা তাদের বাড়ির সামনে ও দেওয়ালে সাঁটানো পোস্টার তুলে নিতে বলেছি কর্মীদের।’
অপরদিকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী দাবি করেন, তিনি আচরণবিধি মেনেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া একক এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হওয়ায় পাড়ায় পাড়ায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছেন আমার পক্ষে। দেওয়াল, সরকারী ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোস্টার লাগানো আচরণবিধি লঙ্ঘন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো দলীয় নেতাকর্মীরা আগ বাড়িয়ে এসব স্থাপনায় পোষ্টার সাঁটিয়েছেন। এখন থেকে যাতে স্থাপনায় পোস্টার না সাঁটায় সেজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের।’
Chakaria  Picture (B.N.P)  04-03-2016চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছেন। কোথাও এ ধরণের আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ হাতেনাতে পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন দৈনিক চকরিয়া নিউজ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। নির্দিষ্ট এই সময় না মেনে কেউ প্রচারণা চালালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া দেওয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনায় যেসব প্রার্থী পোস্টার সাঁটিয়েছেন তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার অপসারণ করতে। দু-একদিনের মধ্যে এই নির্দেশ যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  তবে গতকাল থেকে ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে গুটি কয়েক এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হতে দেখা গেছে । ইতিমধ্যে গতকাল ১জন মেয়রসহ ৩জন কাউন্সিলরকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পাঠকের মতামত: