ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার মহাসড়কে হঠাৎ কেন এত দুর্ঘটনা?

নিউজ ডেস্ক ::  নতুন বছর শুরুর পর জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বেড়ে গেছে দুর্ঘটনা। পর্যটন শহর কক্সবাজার আসা-যাওয়ার এ মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এতে শংকিত হয়ে পড়েছেন যাত্রী-পথচারীসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক, পর্যটন মৌসুমে যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় বেশি ট্রিপের লোভ, আইন না মেনে চলাচল, ইটভাটার মাটি এবং লবণের পানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত এই মহাসড়কের ১২০ কিলোমিটার অংশে ৫টি পৃথক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন ১১ জন। এরমধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি রাতে সাতকানিয়া হাসমতের দোকান এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসের চাপায় নিহত হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও চান্দগাঁও থানার মঞ্জুরুল হকের পুত্র ডা. জুবাইদুল হক ফাহাদ (২৮)। নিহত ডা. ফাহাদ কঙবাজার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে চিকিৎসা সেবা শেষে মোটর সাইকেল যোগে নগরীতে ফিরছিলেন। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি রাতে দোহাজারী পৌরসভার দেওয়ানহাট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন দুই ছাত্র। নিহতরা হলেন চান্দগাঁও হাজেরা তজু কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পটিয়া উপজেলার বারইপাড়া এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র সাহেদুল ইসলাম রিকু (২৪) এবং হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজের বিবিএ সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র লোহাগাড়া উপজেলার পূর্ব কলাউজান গ্রামের মৃত ওসমান ফারুকের পুত্র হামেদ হাসান মেশকাত (২৪)। তারা দু’জনই লোহাগাড়া থেকে মোটর সাইকেলযোগে শহরে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তারা দেওয়ানহাট এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে একটি গাছবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
তৃতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে গত ২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় লোহাগাড়ায়। ঐদিন উপজেলার চুনতি জঙ্গল ঢালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস চাপায় নিহত হন মোটর সাইকেল আরোহী সাতকানিয়া কালিয়াইশ ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার নীলমনি দাশের পুত্র রূপন কান্তি দাশ (৪৮)। রূপন মোটর সাইকেলযোগে কঙবাজার থেকে বাড়িতে আসছিলেন। একই দিন সকালে পটিয়ার মনসায় বোয়ালখালী গোমদন্ডি এলাকার আহমদ মিয়ার পুত্র সুলতান আহমদ (৩৫) নামে পোশাক শিল্প কারখানার এক প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়। তিনিও মোটর সাইকেলযোগে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। এসময় গ্যাস সিলিন্ডারবাহী একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়।
সর্বশেষ গতকাল পটিয়া উপজেলার ভাইয়েরদিঘি এলাকায় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া গতির একটি বাসের সাথে চট্টগ্রামমুখী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং ১১ জন আহত হন। আহতদের অবস্থা গুরুতর বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
এদিকে হঠাৎ দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুছা এসব দুর্ঘটনার জন্য মহাসড়কে অবৈধভাবে চলাচলরত ছোট যানবাহন ও ত্রি-হুইলারকে দায়ী করে বলেন, কমগতির গাড়িগুলো যাতে চলতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী গাড়ির চালকরা কোনো বিশ্রাম ছাড়াই একাধারে গাড়ি চালান। যা দুর্ঘটনার অন্যতম আরেকটি কারণ। এসময় তিনি মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার দাবি জানান। একই সাথে তিনি অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন চালকদের হাতে গাড়ি তুলে না দেওয়ার জন্য গাড়ির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাস মালিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, চালকদের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিয়ে তাদের পাহারায় রাখা সম্ভব হয় না। ফলে চালক তার খেয়াল-খুশি মতো গাড়ি চালান। এতে আইন না মানলে জরিমানা গুনেন, নয়তো দুর্ঘটনার শিকার হন। এসব দুর্ঘটনার পর সব ক্ষতিই মালিককে বহন করতে হয়। তিনি এ ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবি জানান।
চট্টগ্রাম দক্ষিণের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শাহ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্রতিযোগিতা দিয়ে গাড়ি চালানো, যত্রতত্র ওভারটেকিং এবং চালকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে গাড়ি প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে এবং দুর্ঘটনায় পড়ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সকল চালক ও সহকারীকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইন না মানার প্রবণতা পরিহার এবং সঠিক নিয়মে গাড়ি চালাতে হবে।
হাইওয়ে পুলিশ চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরহাদ চকরিয়া নিউজকে বলেন, বেপরোয়া গতি, চলতি পর্যটন মৌসুমে কঙবাজার বেড়াতে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ট্রিপের লোভ, ইটভাটার মাটি ও লবণের পানিতে সড়ক পিছলা হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। তিনি বলেন, লবণবাহী ট্রাকগুলোকে মোটা ও শক্ত পলিথিন বিছিয়ে সেখানে লবণ বোঝাই করার নির্দেশ দেয়া হলেও সে নির্দেশ তারা মানছে না। ফলে লবণ উৎপাদন মৌসুমে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা বারবার মহাসড়কে পুলিশের বিরুদ্ধে গাড়ি চলাচলে হয়রানির অভিযোগ এনে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এখন তো পুলিশ মহাসড়কে কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা বা কোনো গাড়ি জব্দ করছে না। তারপরও কেন এই দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, এখন পরিবহন শ্রমিকরা কী বলে তা দেখে পুলিশ আগের মত আইন অমান্য করা যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

পাঠকের মতামত: