ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

গর্জনিয়াতে পাহাড় কাটার মহোৎসবঃ হুমকির মুখে প্রধান সড়ক

নিউজ ডেস্ক ::  পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলা গর্জনিয়াতে অনেকেই তা মানছেন না। উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতেও থামানো যাচ্ছে না গর্জনিয়া–কচ্ছপিয়া এলাকায় পাহাড় কাটা।
উল্টো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে বেড়েই চলেছে একের পর এক পাহাড় কাটার ঘটনা। সম্প্রতি গর্জনিয়া ইউনিয়নের জাউজপাড়া প্রধান সড়ক ঘেষা পাহাড় কাটার খবরের ভিত্তিতে রামু উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে, গর্জনিয়া- বাইশারী প্রধান সড়কের পাশে বিশাল পাহাড় কেটে মার্কেট নির্মানের স্থাপনা বন্ধ করে দিলেও কাউকে জরিমানা বা আটক করতে পারিনি। অভিযানের পর পরই আবারও ওই পাহাড় খেকোরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানান এলাকার শতাধিক লোক। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে আবারও এমন ভয়ানক পাহাড় কাটার খবর পেয়ে একদল গনমাধ্যমকর্মী শনিবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে যায়। এতে দেখা যায় রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জাউজ পাড়া স্টেশন এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে বিশাল সরকারী পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসবের চিত্র। স্থানীয় কবির আহম্মদ জানান, একই এলাকার শাহাব মিয়ার পুত্র ছৈয়দ আলম ওই বিশাল সরকারী পাহাড়টি কেটে মাটি বিক্রি করছে দায় সারাভাবে। ওই এলাকার রফিক, তৈয়বসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকারী পাহাড়ের জমিদার খ্যাত ছৈয়দ আলম ও মৃত মোঃ নাছিরের ছেলে কবির আহম্মদ ট্রাক প্রতি ১/২ শত করে টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি বিক্রি করে পাহাড়টিকে ইতিমধ্যে এক পাশে সমতলে পরিনত করেছে। যার কারনে বর্তমানে গর্জনিয়া বাইশারী প্রধান সড়কটি মারত্বক ঝুকিতে রয়েছে বলে জানান এলাকার সচেতন মহল। যে কোন সময় ওই পাহাড়টি ধ্বসে পড়ে ভয়াবাহ প্রানহানী হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন পরিবেশবাদী সহ এলাকার হাজারও মানুষ। অভিযুক্ত ছৈয়দ আলমের কাছে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় রশিদ আহম্মদের ছেলে মনসুর ড্রাইভারসহ ২/৩ জন ওই পাহাড় থেকে প্রতিনিয়ত মাটি পাচার করে আসছে।
তবে মনসুর ড্রাইভার অভিযোগ স্বীকার করে মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তিনি ওই মাটি কেটেছে। তবে গজনিয়ার ঐ ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেছেন। উপজেলা প্রশাসনের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত পাহাড় কর্তনের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছে স্থানীয় পরিবেশ বাদী সচেতন মহল। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা–১৯৯৬ ইং সনে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটা অথবা মোচনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র অবশ্যই নিতে হবে। ২০০২ সালের ৯ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর এ সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বলা হয়েছে পাহাড় কর্তন ও মোচনের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা–১৯৫২ এবং ১৯৯৬ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন–২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি, আধা–সরকারি,স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এটি অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফের একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ জরিমানা গুণতে হবে। স্থানীয়দের দাবী প্রশাসনের ছত্র–ছায়ায় অভিযুক্তরা পরিবেশ আইন তোয়াক্কা না করে নিজের খতিয়ানী জায়গা বলে চালিয়ে দিয়ে সরকারী ওই পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। এলাকাবাসী তাদেরাজ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। এই ব্যাপারে রামুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
ছাই থোয়াহ্লা চৌধুরীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারী জায়গায় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মানে অভিযান চালিয়ে সব কিছু ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
অভিযানকালে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান এসিল্যন্ড রামু। অপরদিকে রামুর ঘিলাতলী বিট অফিসার লোকমান জানান, এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ককসবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান জানান, এই ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাহাড় কাটার ব্যাপারে তিনি কাউকে ছাড় দিবেন বলে পরিস্কার জানিয়ে দেন।

পাঠকের মতামত: