ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতের লাল কাঁকড়া রক্ষায় বীচ বাইক বন্ধের দাবী পর্যটকদের

॥ মো. সাইফুল ইসলাম খোকন ॥
বিশ্বের দীর্ঘতম পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সকাল কিংবা বিকালে দেখা মিলত লাল কাঁকড়ার মিছিল। স্বাগত জানাত দেশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের। লাল কাঁকড়ার মিছিল দেখতে হাজার হাজার পর্যটক দরিয়ানগর হয়ে সাগর পাড়ে ছুড়ে যেত তাদের সাথে মিতালী করতে। কিন্তু বিচ বাইক বেপরোয়া চলাচলের কারণে চাপা পড়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যু হচ্ছে লাল কাঁকড়া। এছাড়া ধ্বংস হচ্ছে লাল কাঁকড়ার প্রজননস্থল। বিলুপ্ত হচ্ছে সৈকতের জীববৈচিত্র।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের এক অবিচ্ছেদ্য জীববৈচিত্রের অংশ লাল কাঁকড়া। এক সময় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতে নির্বিঘেœ বিচরণ করত লাল কাঁকড়ার দল। দিগন্তের নীল আকাশ ও গাঢ় নীল জলের সমুদ্রে তীরে হলুদাভ বালুকাময় সৈকতে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার বিচরণে সৃষ্টি হত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক অপূর্ব দৃশ্য। এই দৃশ্য দেখে বিমোহিত হত হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতে মানুষের চলাচল ও যান্ত্রিক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় উক্ত এলাকা থেকে লাল কাঁকড়ার দল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে শহরতলীর দরিয়ানগর সৈকতের বড়ছড়ার মোহনা ও হিমছড়ি ১নং ব্রীজ এলাকায় লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখতে সেখানে ছুটে যেত মানুষ। লাল কাঁকড়ার প্রজননস্থল হিসাবে পরিচিত এই সৈকতে লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখতে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসত প্রকৃতি প্রেমীরা। কিন্তু গত পক্ষকাল ধরে প্রকৃতিপ্রেমীরা দরিয়ানগর সৈকতে এসে হতাশ। লাল কাঁকড়া না দেখেই ব্যর্থ মনোরথে ফিরছেন তারা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় পক্ষকাল ধরে কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর সৈকতে অবৈধভাবে বিচ বাইক চলাচল করছে। বিচ বাইকের নীচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে লাল কাঁকড়ার দল। এর ফলে ভীত সন্ত্রস্ত লাল কাঁকড়ার দল দিনের বেলায় গর্তে অবস্থান করছে, আর রাতের বেলায় খাদ্যের সন্ধান করছে। তবে এর আগেই প্রতিদিন গর্তে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে অসংখ্য লাল কাঁকড়া। এর ফলে এই সৈকতের জীববৈচিত্রও এখন ধ্বংসের পথে।
গতকাল কক্সবাজারে আসা বেশ কিছু পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতে অবাধে লাল কাঁকড়া চলাচল করতে পারে এজন্য বীচ বাইক গুলো বন্ধ করে দেয়া জরুরী।
জানা যায়, লাল কাঁকড়ার বিচরণস্থল নির্বিঘœ করতে ২০০৭ সালে সমুদ্র সৈকতে বিচ বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কৌশলে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে পুনরায় সৈকতে চলাচল শুরু করে বিচ বাইক। তবে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকতের সী-ইন মার্কেট পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্তই কেবল চলাচলের অনুমতি দিলেও এসব বিচ বাইক এখন দরিয়ানগরসহ বিভিন্ন সৈকতে অবৈধভাবে চলাচল করছে। আর কক্সবাজার সৈকতের বিপন্ন জীববৈচিত্রের উপর তৈরী করছে নতুন হুমকি।
পরিবেশবাদীরা মনে করেন, লাল কাঁকড়ার প্রজনন রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিত। না হয় সৈকতের বিপন্ন বীজবৈচিত্রের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। #

পাঠকের মতামত: