ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-লামায় অবৈধ ইটভাটা রক্ষায় কোটি টাকার বাজেট নিয়ে মোক্তার গং মাঠে…

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া ও পাশর্^বর্তী বান্দরবার পার্বত্য জেলার লামা-আলীকদমসহ ৪টি উপজেলায় রয়েছে ৪৮টি ইটভাটা। কেবল লামা উপজেলার ফাইতং নামের একটি ইউনিয়নেই রয়েছে ২৬টি ইটাভাটা। নেই কোন ইটভাটায় বৈধ কাগজপত্র। এসব ইটাভাটায় বছরে পুড়ছে শতকোটি টাকার কাঠ। ইট তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য যত্রতত্রভাবে মাটি কাটায় বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে পাহাড়। এতে করে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি ক্রমশ পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। আর এসব অবৈধ ইটভাটায় প্রশাসনের অভিযান প্রতিরোধ করতে কোটি টাকার ক্যাশ বাজেট নিয়ে অফিস-আদালত, জনপ্রতিনিধি ও নেতানেত্রীদের বাসবাভনে হাজির হচ্ছে ম্যানেজ কমিটির প্রধান মোক্তার গং।
জানাগেছে, এসব ইটভাটার মালিকদের কাছে বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। সংশ্রিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, থানা ও ফাড়ি পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে সংরক্ষিত ও অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে কঁচি কাঁচা বৃক্ষরাজি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে জ¦ালানী হিসেবে । নির্বিচারে পাহাড় কেটে পাহাড়ের মাটিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরীর কাজে। প্রতিটি ইট ভাটায় যে পরিমানে ইটতৈরী হচ্ছে সে অনুযায়ী সরকারী ভ্যাটও পরিশোধ করা হচ্ছে না। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব যেমন হারাচ্ছে তেমনি পরিবেশও ধব্ংস হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইটভাটা স্থাপনের সর্বশেষ নীতিমালা না মেনে অর্থশালী ইটভাটা মালিকেরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশের ইটভাটায় স্থাপন করে সরকারী ও ব্যক্তির মালিকানাধীন পাহাড় থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
এক সময়ের হরেক প্রজাতির বন্য প্রাণীসহ হাতির অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ও ফাসিয়াখালীর ইউনিয়নের বনভুমিতে বেশীর ভাগ ইটভাটা স্থাপনের কারণে বন্যপ্রাণী ও হাতির আবাসস্থাল তচনচ হয়ে গেছে। এমনকি ইটভাটার পাশর্^প্রতিক্রিয়ায় অনেক আদিবাসী পাড়া বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
সুত্র মতে লামা ও আলীকদম উপজেলায় অবৈধভাবে স্থাপন করায় ইটভাটার বেশীরভাগ মালিক বহিরাগত। তারা অবৈধভাবে স্থাপন করা ইটভাটায় বিনাবাধায় ইটপোড়ানোর লক্ষে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করার জন্যে ফাইতং এলাকার ইটভাটার মালিক মোক্তার আহমদ প্রকাশ মোক্তার ড্রাইভার ও করিব আহমদের নেতৃত্বে প্রতি ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে ২লাখ টাকা করে ৪৮টি ইটভাটা থেকে সর্বমোট ৯৬লাখ টাকা সংগ্রহ করে ঘাটে ঘাটে বিলাচ্ছে। ফলে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ইটভাটার মালিকদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত মোক্তার ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রশাসনের সকল দপ্তরে মাসোহারা দিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করছি। এসব পত্রিকায় লিখলেও একটি ইটভাটাও বন্ধ হবেনা। পত্রিকায় লেখালেখি করলে প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কিছু জরিমানা আদায় করে। এছাড়া কোন ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার নজির নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত, অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা স্থাপন ও ট্রাকযোগে ইট পরিবহনের কারণে ধূলায় পরিবেশ বিষন্ন হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা ইটভাটার ধূয়া ও ধূলা বালির কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লামা উপজেলা প্রশাসন রবিবার ৫টি ইটভাটিতে অভিযান চালালেও তা নামমাত্র। এর ফলে ইটভাটির মালিকরা আরও আস্কারা পেয়ে বসেছেন। কঠোর হস্তে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না করলে অচিরেই মারাত্বক পরিবেশ বিপর্য ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা।

পাঠকের মতামত: