ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘আত্মসমর্পণে’ শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে তাঁরা কোথায় কখন কার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন তা জানা যায়নি।

তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি এনামুল হক আত্মসমর্পণ করার জন্য রওনা হওয়ার বিষয়টি তাঁর ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি ও টেকনাফ থানার একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তিনি রওনা হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সীমান্তের এসব ইয়াবা কারবারি মাইকে প্রচার করে লোক জমায়েত করেন। লোকজনকে আত্মসমর্পণ করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তাঁরা দোয়া চান, যাতে ‘জান নিয়ে’ ফিরতে পারেন। লোকজনের সঙ্গে কোলাকুলিও করেন তাঁরা। পাড়া-পড়শীরা অনেকেই কারবারিদের দোয়া করে দেন। আবার অনেকেই বিদায় দেন চোখের জলে।

টেকনাফ সীমান্তে গত কিছুদিন ধরে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা চলছে। এ কাজে কে বা কারা জড়িত তা স্পষ্ট না হলেও কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকার ইয়াবা কারবারিরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।কয়েক দিন ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা কারবার ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি তাঁর লোকজন নিয়ে আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী এ বিষয়ে বলেন, ‘এমপি বদি আমাকে মোবাইল ফোনে ফোন করে আমার দুই ছেলেকেও আত্মসমর্পণ করতে অনুরোধ জানান। আমি তাঁকে (এমপি বদি) বলি, আমার ছেলেরা তালিকাভুক্ত হলেও তারা জীবনেও এমন ঘৃণ্য কাজে জড়িত হয়নি। তারা আত্মসমর্পণ করবে কেন?’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নিজস্ব জিপ গাড়িটি সেখানে দেখা গেছে। তবে বদি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কি না জানা যায়নি।

যাঁরা আত্মসমর্পণ করার জন্য যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এনামুল হক, তাঁর ভাগিনা নুরুল ইসলাম নুরু, টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন পল্লানপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল্লাহ এবং সদর ইউনিয়নের আলী আহমদের (সাবেক চেয়ারম্যান) ছেলে জিয়াউর রহমানের নাম জানা গেছে। তাঁরা ছাড়া টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো অর্ধশতাধিক ইয়াবা কারবারি এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ইউপি মেম্বার এনামুল হকের বিরুদ্ধে ১৭টি মাদক মামলা রয়েছে। শাহ আলমের বিরুদ্ধেও চার-পাঁচটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার তৈরি মাদক কারবারিদের তালিকায় তাঁদের নাম রয়েছে।

এদিকে চকরিয়াসহ জেলার অন্যান্য এলাকার তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারিরা আদেৌ আত্বসমর্পণ করছে কিনা তা জানা যায়নি।তবে চকরিয়াসহ তার আশপাশের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে এলাকা চষে বেড়াচ্ছে।

এলাকার লোকজন বলছে, এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৩৭ জন নিহত হয়েছে। আত্মসমর্পণের বিষয়টি যদি আরো দুই মাস আগে বলা হতো, তাহলে এতগুলো লোকের প্রাণহানির ঘটনাও হয়তো ঘটত না। লোকজনের প্রশ্ন, সংসদ সদস্য বদির পরিবারে তালিকাভুক্ত ২৬ সদস্য এবং আরো অনেক শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা কারবারির পরিবারের তালিকাভুক্ত সদস্যদের কী হবে?

এলাকাবাসী বলছে, আরেক শীর্ষ ইয়াবা কারবারি টেকনাফের শীলবুনিয়াপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল করিমসহ অন্যান্য ইয়াবা কারবারির অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের ব্যাপারে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে? এসব কি বৈধ ঘোষণা করা হবে?

পাঠকের মতামত: