ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঁশখালী ইকো পার্কে বনদস্যুরা তৎপর

বাঁশখালী (চট্রগ্রাম) প্রতিনিধি ::

বাঁশখালী ইকো পার্ক এখন অরক্ষিত। চার্জবল করাত দিয়ে প্রকাশ্যে বনদস্যুরা কেটে নিচ্ছে সেগুন গাছ। এরই মধ্যে পুরো সেগুন বাগানের অর্ধশতাধিক গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। গত ১২ দিন ধরে প্রকাশ্যে গাছ কাটার মহোৎসব নিয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে অভিযোগ করে আসলেও কারো বিরুদ্ধে মামলা করেননি বন কর্মকর্তারা।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁশখালীতে থাকা বন কর্মকর্তা শেখ আনিছুজ্জামানের সঙ্গে বন দস্যুরা আঁতাত করে ইকো পার্কের গাছ নির্বিচারে কাটছে। তাঁর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকায় বাঁশখালী ইকো পার্ক অরক্ষিত হয়ে ওঠেছে।

৮ জানুয়ারি দুপুর ১টায় ইকোপার্কের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় দেখা গেছে, বনদস্যুদের কাটা সেগুন গাছ পড়ে আছে। স্থানীয় মনছুরিয়া বাজার এলাকায় একটি স-মিলেও বিস্তর সেগুন গাছ মজুত রয়েছে। এসব গাছ নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় বনকর্মকর্তার নির্দেশে তদন্তে করতে আসা চকরিয়া সাফারি পার্কের রেঞ্জার উত্তর কুমার পালকে অভিযোগ করলেও তিনি এসব গাছ জব্দ করেননি। তবে তিনি উত্তেজিত গ্রামবাসীকে এসবের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করেন। ওই সময় উপস্থিত গ্রামবাসী বনদস্যুদের চিহ্নিত করে দিলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ওই বনদস্যুদের সঙ্গে বাঁশখালী ইকো পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আনিছুজ্জামানের সার্বক্ষণিক উঠাবসা রয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার অভিযোগ করে বলেন, ‘ইকো পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আনিছুজ্জামান ইকো পার্কের বনজ গাছগুলো ইজারা নেয়ার মতো করে প্রতিনিয়ত বনদস্যুদের সাথে আঁতাত করে কাটাচ্ছেন। গত ৩ বছর ধরে অন্ততঃ ৩ হাজার গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন তিনি। সরকারিভাবে বনায়ন করা গাছের সাথে হিসাব মিলালে আকাশ-পাতাল ব্যবধান ধরা পড়বে। এসব ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলেও তিনিও দায়সারা জবাব দিয়ে এড়িয়ে যান। বনদস্যু ও বন কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে বৈঠক হলেও কর্তৃপক্ষ এ বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

শীলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক সিকদার বলেন, ‘বন কর্মকর্তারা বনদস্যুদের সাথে আঁতাত করে প্রতিনিয়ত ইকো পার্কে গাছ কাটছে। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের সাথে ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদের দহরম-মহরম থাকায় তদন্তে এসে প্রমাণ পেয়েও কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না। ঘুষের টাকার কাছে সবাই জিম্মি। ফলে ইকো পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ছে ইকো পার্ক। বনদস্যু ও বন কর্মকর্তাদের মোবাইল কল লিস্ট তদারকি করলে যাবতীয় রহস্য বের হয়ে আসবে।’

বিভাগীয় বনকর্মকর্তার নির্দেশে তদন্তে করতে আসা চকরিয়া সাফারি পার্কের রেঞ্জার উত্তর কুমার পাল বলেন, ‘আমি মাত্র ৫টি কাটা সেগুন গাছের গোড়ালি ও কিছু গাছের টুকরা দেখেছি।

এ ছাড়া সবার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, কয়েকদিন আগেও কিছু গাছ বনদস্যুরা অস্ত্র দেখিয়ে নিয়ে গেছে। আমি যা দেখেছি, যা শুনেছি এমন প্রতিবেদন দেব। এর বেশি কিছু আমার করার ক্ষমতা নেই। পড়ে থাকা কাটা গাছগুলো উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছি।’

বাঁশখালী ইকো পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আনিছুজ্জামান বলেন, ‘আরও কয়েকদিন তদন্ত করার পর বনদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করব। গ্রামবাসী যাদের বনদস্যু বলছে তারা গাছ কাটেনি। স্থানীয় বিরোধের কারণে তাদের নাম বলা হচ্ছে। আমি তাদের গাছ কাটতে বাঁধা দিই বলে আমার নামেও অভিযোগ করা হচ্ছে। কিছু গাছ কাটা হয়েছে এটা সত্য।’

পাঠকের মতামত: