ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শহরে রাত ১০টা পর্যন্ত দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
পর্যটননগরী কক্সবাজার শহরে যানজট নিরসনে ফের তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। সকাল আটটা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত প্রতিদিন টানা ১৬ ঘণ্টা শহরে দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশ করতে পারবে না বলে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারী) থেকে নতুন এ নিয়ম চালু হবে।
সোমবার (১৪ জানুয়ারী) সকালে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সবাইকে অবগত করার জন্য মাইকিং করা হয়। জেলা পুলিশের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়, সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত শহরে কোন ধরণের দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশ করতে পারবে না। বাস তথা পরিবহন গুলো কলাতলী মোড় পর্যন্ত আসতে পারবে। এই নিদের্শনা না নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা জারি করা হয়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শহরে দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন বছরে পর্যটন শহরকে যানজটমুক্ত করতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে ট্রাফিক পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে সোমবার শহরে মাইকিং করা হয়।
কক্সবাজার জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) কামরুজ্জামান বকুল বলেন, আগে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত শহরে দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত সময় যানজট এড়াতে পর্যাপ্ত নয়। যাত্রী পরিবহন করার জন্য দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাস রাত ৮টার দিকে শহরে প্রবেশ করে ঝাউতলাসহ বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি করে। কিন্তু পরিবহন গুলো প্রবেশের সময়টা ৮টা থেকে বাড়িয়ে ১০ টা পর্যন্ত হলে তখন আর শহরের ভেতর যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে না। তাই পরিবহন সংস্থা গুলো বাধ্য হয়ে বাসটার্মিনাল থেকে যাত্রী পরিবহন করবে। তখন যানজটও হবে না।
তিনি আরও বলেন, রাত ৯টা, সাড়ে ৯টা অথবা ১০ টায় যে বাস গুলো কক্সবাজার থেকে ঢাকা অথবা অন্যান্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ে সেগুলো নতুন নিয়ম অনুযায়ী যাত্রী পরিবহনের জন্য শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা বাসটার্মিনাল এলাকার কাউন্টার থেকে যাত্রী পরিবহন করতে বাধ্য হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নতুন নিয়মে দূরপাল্লার বাসগুলো সর্বোচ্চ কলাতলীর মোড় পর্যন্ত আসতে পারবে। সেখানে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট পার্কিং স্থানে চলে যাবে। এছাড়া অন্যান্য পরিবহন গুলো রাত ১০ টার পর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে শহরে প্রবেশ এবং বের হতে পারবে।
আগেও যানজট নিরসনে একাধিকবার এই উদ্যোগ নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে আলোর মুখ দেখে না। যখন তখন শহরে দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশ এবং বের হওয়া এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ফলে নিত্যদিন যানজট লেগেই আছে। এতে অতিষ্ঠ পর্যটক ও স্থানীয়রা।
বছরখানেক আগে তৎকালিন অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বে একটি টীম শহরের বিভিন্ন কাউন্টার পরিদর্শন করে দূরপাল্লার বাস না ঢুকতে সতর্ক করেন। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
কিন্তু এবার আর উদ্যোগটি ঘোষণা বা সিদ্ধান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ দেখতে চান না সচেতন মহল। এই নিয়মটি যথাযথ পালনে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে হোটেল মালিকেরা বলছেন, অতীতে যে সিদ্ধান্ত গুলো নেওয়া হয়েছিল সেখানে পর্যটকবাহী বাসগুলো বাসটার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার নিয়ম ছিল। কিন্তু বাসটার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে দিলে নানা হয়রানির শিকার হয় পর্যটকরা। পর্যটকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যায়। আগের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে এটিও একটি অন্তরায়।
কিন্তু এবারের সিদ্ধান্তে  দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী নিয়ে কলাতলী মোড় পর্যন্ত যেতে পারবে। তাই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে হোটেল মালিকেরাও সহযোগিতা করবে।
কক্সবাজার ট্যুরিজম সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, যদি পর্যটকবাহী বাসগুলো কলাতলী মোড় পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে আসতে পারে তাহলে উদ্যোগটি অত্যন্ত যুগোপযোগী। এরফলে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব পড়ার কোন অবকাশ নেই। তাই যানজট এড়াতে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সবাইকে সহযোগিতা করা দরকার।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘আগে থেকেই নিয়মটি আছে। যানজট এড়াতে একটু পরিবর্তন এনে আবার কার্যকর করা হচ্ছে।’

পাঠকের মতামত: