ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রাখাইনে আরাকান আর্মিরা চারটি পুলিশ পোস্টে একযোগে হামলা, ১৩ পুলিশ নিহত

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া ::

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তর রাখাইনের বুচিডং টাউনশিপের বিভিন্ন এলাকায় ফের চারটি পুলিশ পোস্টে সিরিজ হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে এ হামলার ঘটনায় দায়িত্বরত ১৩ জন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে বলেছে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি এ হামলা চালিয়েছে। এছাড়া মালয় মেইল ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
মিয়ানমারের অনলাইন মিডিয়া ইরাওয়ার্দি, ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার ও এএফপি জানিয়েছে, গতকাল ভোর রাতে সহিংসতা কবলিত রাখাইন রাজ্যের উত্তর রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি বুচিডং টাউনশিপের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ পোস্টে সিরিজ হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাউ মিন থুনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আরাকান আর্মির সশস্ত্র লোকজন বুচিডং এলাকায় সরকারি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় বেশ কিছু নিরাপত্তাকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন বলে
জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, আরাকান আর্মির একশজনেরও বেশি সদস্য একযোগে চারটি সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায়।
নিহতের সংখ্যা ১৩ জন হলেও ব্রিগেডিয়ার জেনালের জাউ মিন থুন জানিয়েছেন, এ হামলায় অন্তত ৯ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা ঘটনাস্থল থেকে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরো নির্দিষ্ট তথ্য জানাতে সক্ষম হবে। তিনি জানান, উত্তর বুচিডং টাউনশিপের কয়ুং তাইং, নাগগা মাইন তৌ, ক হ্‌তে লা এবং কোনে মিন্ট এসব সীমান্ত চৌকির আরাকানিজ গ্রামের মধ্যে অবস্থিত।
জানা গেছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলা লড়াইকালে ইতোমধ্যে চার হাজারেরও বেশি আরাকানিজ নৃগোষ্ঠী গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এসব গৃহহীনের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে স্থানীয় এনজিওদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে কয়ুং তাইং পুলিশ পোস্টের পুলিশের মেজর সাই বু হান রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের ঘটনার এক পর্যায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির ওপর হেলিকপ্টার হামলা চালিয়েছিল এবং এতে ১৪ জন আরাকান আর্মির যোদ্ধাকে যুদ্ধবন্দি করে রেখেছিল। সম্ভবত তাদের সহযোদ্ধাদের ছাড়িয়ে নিতে আরাকান আর্মি এ হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইন থু খা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে তিনটি চিঠি দিয়ে প্রতিটি পুলিশ, ব্যবসায়ী ও বুচিডং টাউনশিপের প্রতিটি গ্রাম প্রশাসককে আলাদাভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা আরাকান আর্মি সমর্থকদের হয়রানি করা থেকে বিরত থাকে।
বিডিনিউজ জানায়, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই রাজ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে গত বছর আগস্ট থেকে কয়েক মাসের মধ্যে। সেখানে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ রাখাইনদের আরো অধিকারের দাবিতে লড়াইরত আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয় ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও।
মিয়ানমারে জাতিগত স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে গত মাসে দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চার মাসের জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তবে ওই ঘোষণায় রাখাইনকে যুদ্ধবিরতির বাইরে রাখা হয়।
রাখাইনের এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, যাদের মধ্যে রাখাইনরাও রয়েছে। এদের সবাই মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। অপরদিকে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জাউ মিন থুন জানান, ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার ৭১ বছর পূর্তি উপলক্ষে মিয়ানমারজুড়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই হামলা শুরু হয়।
তবে আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইন থু খা বলেছেন, স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে তাদের এই হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা এখনো স্বাধীন নই। আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবসও নয়।

পাঠকের মতামত: