ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

১১টি সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ: ভোটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড

নিউজ ডেস্ক ::

স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান সিইসি। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৬.৩৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৪.৯ শতাংশ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৯২টি আসন পেয়ে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকল। এরপর সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫১.৩ শতাংশ। ওই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২২০টি আসন। আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩৯টি আসন। মুসলিম লীগ পেয়েছিল ১২টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৫টি ও অন্যান্য প্রার্থীরা পান ১৬টি আসন।
১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬১.৩ শতাংশ। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১৮৩টি আসন। আওয়ামী লীগ ৭৬টি, জামায়াত ১০টি, সিপিবি ৬টি ও স্বতন্ত্র-অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৫টি আসন।
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫২.৫ শতাংশ। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২৫১টি আসন। সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি, জাসদ (সিরাজ) তিনটি ও অন্যান্য প্রার্থীরা ২৭টি আসনে জিতেছেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ছিল দেশের সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৫.৪ শতাংশ। এতে বিএনপি পেয়েছে ১৪০টি আসন। আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, জামায়াত ১৮টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ১৬টি আসনে জিতেছিল।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ছিল একতরফা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ২১ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটারের উপস্থিতি ছিল এই নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে গঠিত সংসদও ছিল ক্ষণস্থায়ী। নির্বাচনে বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন ১১টি আসন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৫.৪৯ শতাংশ। এতে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১৪৬ আসন। বিএনপি পেয়েছে ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি ও স্বতন্ত্র-অন্যান্য দলের প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬টি আসন।
২০০১ সালের ১ অক্টোম্বর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৫ শতাংশ। এতে বিএনপি পেয়েছে ১৯৩টি আসন। আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৬২টি, জামায়াত ১৭টি, জাতীয় পার্টি ১৪টি, জাতীয় পার্টি (এন-এফ) ৪টি, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল পেয়েছে ১০টি আসন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে, যা ৮৬.৩৪ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছে। বিএনপি পেয়েছে ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি ও অন্যান্য প্রার্থীরা ১৩টি আসনে জয় পেয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ছিল নির্বাচন ছিল অনেকটা একতরফা। এই নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নেয়নি। নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল কম। ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসন পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ৩৪টি ও অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩২টি আসন।
সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। এই নির্বাচন ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন। এতে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৭টি আসন। মিত্ররা পেয়েছে ৩১টি আসন। বিএনপি জোট পেয়েছে ৭টি আসন। এরমধ্যে বিএনপি পেয়েছে ৫টি ও মিত্ররা পেয়েছে দুটি আসন। স্বতন্ত্র বা অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন তিনটি আসন।
১১টি সংসদ নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে বিশাল জয় পেয়েছিল। ২৯২টি আসনে জিতেছিল। ৪৫ বছর পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আরেকবার বিশাল জয় পেল আওয়ামী লীগ। এককভাবে পেয়েছে ২৬৭টি আসন। আর জোটগতভাবে পেয়েছে ২৮৮টি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে বিএনপি। ২৭৮টি আসনে জিতেছিল। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া অন্যান্য দল অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর বেশিদিন ক্ষমতায় টিকতে পারেনি বিএনপি।

পাঠকের মতামত: