ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

যে কারণে নিজের ভোটও পেলেন না হাসান মারুফ রুমী, বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ছবি : হাসান মারুফ রুমীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

বিবিসি বাংলা ::

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আলোচিত ঘটনার একটি চট্টগ্রাম-১০ আসনের গণসংহতি ফোরামের প্রার্থী হাসান মারুফ রুমীর ০ ভোট পাওয়া। বিষয়টি সোশ্যাল সাইটেও বেশ আলোচিত হয়েছে। কিন্তু তিন লক্ষের বেশি ভোটার যে চট্টগ্রাম-১০ আসনে, সেখানে একজন প্রার্থীর একটি ভোটও না পাওয়া কতটা বিশ্বাসযোগ্য – কিংবা কতটা বিস্ময়কর? প্রশ্ন উঠেছে, এমনকি তিনি নিজের ভোটটিও বা কেন পেলেন না?

গণমাধ্যমকে হাসান মারুফ জানান, তিনি চট্টগ্রাম শহরের দেওয়ানহাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। শৈশব থেকে তার বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা সবই চট্টগ্রামে। আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুলের পাট চুকিয়ে ওমর গণি এমইএস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন মারুফ হাসান রুমী। এরপর সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে বি.এ. পাশ করেন তিনি।

হাসান মারুফ জানান, তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করেছেন। তার ভাষায়, ‘বছরখানেক আগে চট্টগ্রামের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির দাবিতে একটি আন্দোলন হয়েছিল, যে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের সে সময় বলা হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। প্রায় বছরব্যাপী ঐ আন্দোলনের অংশ ছিলাম আমি।’

হাসান মারুফ আরো বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পরিকল্পনার প্রতিবাদেও আন্দোলন করেছিলাম, যেটি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুরক্ষার আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল।’

এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে হওয়া আন্দোলনের অংশ ছিলেন বলে জানান হাসান মারুফ। কাজেই হাসান মারুফর ধারণা নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে তার একটি ভোটও না পাওয়ার বিষয়টি অবিশ্বাস্য। নির্বাচনের আগে তার পক্ষে অনেক নেতাকর্মী প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলে জানান মারুফ হাসান রুমী।

তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মানুষের নিত্যদিনের আন্দোলনে-সংগ্রামে পাশে ছিলাম। আমি একটি ভোটও পাবো না, সেটি বিশ্বাসযোগ্য না। ভোট গ্রহণের দিন আমার কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই ভোট দিতে না পারলেও আবার অনেকেই ভোট দিয়েছেন বলে আমাকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তার কর্মী-সমর্থক এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ভোট দেয়ার পর তাদের ভোটার নম্বরও তাকে জানিয়েছিলেন। যদি ধরেও নেয়া যায় কর্মী-সমর্থক বা পরিবারের সদস্যরা তাকে ভুল তথ্যই দিয়েছেন, কিন্তু হাসান মারুফ রুমী তার নিজের ভোটটি কাকে দিলেন? নির্বাচনে একজন প্রার্থী একটি ভোটও না পেলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হলো, নিজের ভোটটি কেন তিনি নিজের মার্কায় দিলেন না? সেটা গেল কোথায়?

মারুফ হাসান রুমীকে ঠিক এই প্রশ্নটি করা হলে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য। হাসান মারুফ বলেন, ‘আমার বাসা দেওয়ানহাটের যে এলাকায়, সেটি চট্টগ্রাম-৯ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের সীমানায় পড়েছে। যার কারণে আমি চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী হলেও ভোটার চট্টগ্রাম-৯ আসনের।’

অর্থাৎ নিজের ভোটটি নিজেকে দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও, সেটির কোনো সুযোগ ছিল না হাসান মারুফর সামনে। তিনি বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন যে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু নিজেকে তিনি ভোটটি দিতে পারেননি। তবে তার কাছে অবশ্য অনেকেই দাবি করেছেন যে তারা চট্টগ্রাম-১০ আসনে গণসংহতি ফোরামের প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তাদের ওই দাবি কতটা সত্য তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই হয়তো এখন স্বাভাবিক, কারণ তিনি যে শূন্য ভোট পেয়েছেন।

অর্থাৎ নির্বাচন নিয়ে নানান অভিযোগ ওঠার পরও হাসান মারুফ নিজেই নিজেকে ভোট দিতে না পারায় তার শূন্য ভোট পাওয়ার ঘটনাটিকে একেবারেই অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না।

পাঠকের মতামত: