ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষনা: ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ১৪ প্রতিশ্রুতি

নিউজ ডেস্ক ::   রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দু:শাসনের অবসান ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এসময় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসলে রাষ্ট্রের মালিকানা শুধুমাত্র নির্বাচনে জেতা দলের নয় বরং নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতা কর্মী এবং সমর্থকদেরও থাকবে।

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৪টি প্রতিশ্রুতিতে যা বলা হয়েছে, তা সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হলো

১. প্রতিহিংসা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য

১০ বছরে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানি মূলক কার্মকান্ডের সুরাহার লক্ষ্যে খোলা মনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
পুনরায় যাতে একদলীয় শাসন পুন:জন্ম না হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা

বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হবে
রিমান্ডের নামে নির্যাতন ও সাদা পোশাকে গ্রেফতার বন্ধ করা হবে।
মামলাজট কমানোর জন্য উচ্চআদালতের বাৎসরিক ছুটি ৬ সপ্তাহ করা।
যুদ্ধপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান রাখা সহ সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়।
৩. ক্ষমতার ভারসাম্য

নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান রেখে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা প্রদান করার পাশাপাশি সবার সাথে আলোচনা করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হবে।
একটানা দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান সহ সংসদের ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে নির্বাচিত করা হবে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সভাপতি পদ প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে এবং ন্যায়পাল নিয়োগে বিরোধী দলের মতামতকে গুরত্ব দেয়া হবে।
সবধরণের নিয়োগের জন্য বিরোধী দলীয় সাংসদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে।
সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ২০ শতাংশ নারী সদস্য মনোনয়নের বাধ্যবাধকতা সহ সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে।
৪. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ

৫ বছরে কমপক্ষে ৩০% বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয় করা।
জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন করা।
পৌর এলাকায় সিটি গভর্ণমেন্ট চালু করা।
৫. দুর্নীতি দমন ও সুশাসন

বর্তমান সরকারের আমলের দুর্নীতির তদন্ত করে তা বিচারের আওতায় আনা হবে।
দুর্নীতিবাজ সরকাির কর্মকর্তা গ্রেফতারে সরকারের অনুমতির নেয়ার বিধান বাতিল করা হবে।
বর্তমানে চলমান কোন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবেনা, তবে বর্তমান সরকারের শেষ ২ বছরে তড়িঘড়ি করে নেয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে।
ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকারি মদদে শেয়ার বাজার লুটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভিন দেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে রক্ষার দৃঢ় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং দেশীয় সংস্কৃতি প্রসারে উদ্দ্যোগ নেয়া হবে।
৬. কর্মসংস্থান ও শিক্ষা

পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারি চাকুরিতে কোন বয়সসীমা থাকবেনা।
শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা থাকবে।
ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা থাকবে।
আগামী ৩ বছরের মধ্যে সকল সরকারি শূণ্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
ওয়ার্ক পারমিটবিহীন সকল বিদেশী নাগরিকদের কর্মসুযোগ বন্ধ করা হবে।
পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হবে।
মোবাইল ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে।
প্রথম বছর থেকেই ডাকসু সহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।
৭. স্বাস্থ্য

সকল জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন পূর্বক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।
সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বৎসর ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
তিন মাসের মধ্যে ঔষধ ও ডায়গনস্টিক পরীক্ষার সকল খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে।
সকল নাগরিককে স্থাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হবে।
৮. জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন

* দুবছরের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে।
* শ্রমিক ও ক্ষেত মজুরসহ গ্রাম ওশহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভ মূল্য রেশনিং চালু করা হবে।
* জলমহাল ও হাওরের ইজারা বাতিল করে মৎসজীবী ও দরিদ্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
* পুর্নবাসন ছাড়া শহরের বস্তিবাসী ও হকারদের উচ্ছেদ করা হবে না।
* সরকারি পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে।
* মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রনয়নের মাধ্যেমে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
* একবছরের মধ্যে মানুষকে ভেজাল ও রাসায়সিক মুক্ত নিরাপদ খাদ্য পাবার নিশ্চয়তা দেয়া হবে।
৯. বিদ্যৎ ও জ্বালানী

*প্রথম বছর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবেনা
১০. প্রবাসী কল্যাণ

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
ইউরোপ, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শ্রমশক্তি রফতানির জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা হবে।
প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে মরদেহ সম্পূর্ন সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে আনা হবে এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
১১. নিরাপদ সড়ক এবং পরিবহন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপরে নৃশংস হামলা কারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনাহবে।
শহরে গণ পরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন নীতি প্রণয়ন করা হবে এবং মানুষের জন্য আরামদায়ক গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।
রেলখাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রসারণ করা হবে।
১২. প্রতিরক্ষা ও পুলিশ

প্রতিরক্ষাবাহীনির জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য সব সরঞ্জাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেনা হবে।
পুলিশের ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি করা হবে, জাতিসংঘ বাহিনীতে পুলিশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৩. পররাষ্ট্র নীতি

সমতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করা হবে।
চীনের ‌’ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে যে সকল প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য লাভজনক সে গুলোতে যুক্ত হবে।
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টন ও রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।
১৪. জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করার জন্য বাংলাদেশ আরো বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত করবে।

পাঠকের মতামত: