ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী কলেজে অনার্স কোর্স চালুর দাবি

লামা প্রতিনিধি ::

লামা ও আলীকদম উপজেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি মাতামুহুরী কলেজ, লামা। নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে সবুজ পাহাড়ের ছায়াঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত কলেজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বেড়েছে লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ। সদ্য জাতীয়করণকৃত কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু করা এখন এলাকার অভিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনপদ লামা ও আলীকদম উপজেলার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলী মিয়া প্রতিষ্ঠা করেন হাজী মো. আলী মিয়া কলেজ। ১৯৮৭ সালে আলীকদম সেনাজোনের তৎকালীন জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. শাহজান মিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় স্থানীয় গণ্যমান্য ও সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক সভায় মো. আলী মিয়ার প্রস্তাবে ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের তৎসময়কার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সুবিদ আলী ভূঁঞা মাতামুহুরী নদীর নামানুসারে ‘মাতামুহুরী কলেজ’ নামে কলেজটির নাম দেন। পরের বছর কলেজটি পৌরসভার টিটিঅ্যান্ড ডিসি থেকে প্রথমে লাইনঝিরি পরে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এম আশরাফুল ইসলাম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং আলীকদম সেনাজোন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই কলেজটি মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি লাভ করে। ১৯৮৯-৯০ সালে বিশেষ বিবেচনায় কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। একই বছর একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি পায়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় আলীকদম সেনা জোন, জেলা পরিষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতায় কলেজ ডিগ্রি কোর্স প্রথম অধিভুক্তি লাভ করে।

এদিকে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ঝরে পড়া ও কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি প্রোগ্রাম এবং ২০১৫ সালে বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম চালু হয়। সব শেষে চলতি বছরের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে কলেজে প্রায় আড়াই হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে।

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ৩ বার দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবার ১৯৯২ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে সব শেষে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা জানিয়েছেন, মূলত বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই গতিশীল হয়ে উঠে কলেজের সার্বিক পরিবর্তন। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস নির্মাণ, ছাত্রাবাসের প্রাচীর নির্মাণ, কলেজ জামে মসজিদ নির্মাণ ও পরবর্তীতে আধুনিকায়নকরণ, ছাত্রাবাসের দ্বিতল ভবন নির্মাণ, ছাত্রীনিবাস এবং শিক্ষক কোয়ার্টারসহ নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কনফারেন্স হল নির্মাণ, ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গেটসহ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাঠ উন্নয়ন এবং ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রাবাস ও অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজ এবং ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ভৌত অবকাঠামোগত নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে কলেজ ক্যাম্পাস।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াসির আরাফাত জানান, চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই চলমান উন্নয়নকাজগুলো সমাপ্ত হবে।

কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তাওফিকুর রহমান জিসান বলেছে, ‘কলেজের মাঠ উন্নয়ন, শহীদ মিনার নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি কলেজের পরিবেশ ও লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। কলেজের শিক্ষকরা যেমন নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন, তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী আইরিন আক্তার বলেন, সরকার কলেজটিকে জাতীয়করণ করায় আমরা সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এলাকার বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার লাভের সুযোগ আমাদের অনেকেরই নেই। তাই যদি কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু করে তাহলে লামা ও আলীকদম উপজেলার ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে।’

কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভাষক মো. আইয়ুব বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হচ্ছে। কলেজটি জাতীয়করণের পিছনেও সম্পূর্ণ অবদান পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর। এ অবস্থায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ। বর্তমানে কলেজে মান সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সকলে বদ্ধপরিকর।’

কলেজ পরিচালনা কমিটির হিতৈষী সদস্য, লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে জেলার মধ্যে লামা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সেখানে অত্র কলেজের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির আন্তরিকতায় কলেজটি জাতীয়করণসহ ভৌত অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কলেজটির লেখাপড়ার মান, পরীক্ষার ফলাফল ও শান্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কলেজে দিন দিন লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু এখন সময়ের দাবি। অনার্স কোর্স চালু হলে লামা ও আলীকদমসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দক্ষ ও সুশিক্ষিত মানবসম্পদে পরিণত হতে সক্ষম হবে।’

কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাতামুহুরী কলেজে সময়ের তুলনায় বেশি উন্নয়ন হয়েছে। কলেজটি জাতীয়করণ করা এবং কলেজের ভৌত অবকাঠামোর যে উন্নয়ন সব কিছুই বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির অবদান। তিনি কলেজটিকে নিজের পরিবারের অংশ মনে করে আমাদের কিছু চাওয়ার আগেই কলেজের সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছেন বলেই কলেজ ক্যাম্পাস শিক্ষা উপযোগী নান্দনিক হয়ে ওঠেছে। কলেজে মানসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি পড়ালেখার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আগামী প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ সুগম হবে।’

স্থানীয় অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালুর দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালুর মাধ্যমে সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা কলেজের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসটি পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের একটি আদর্শ ক্যাম্পাসে পরিণত হবে।

পাঠকের মতামত: