ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যে বাজার সয়লাব

timthumb.phpনিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::

বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হলেও আইনটির কোন প্রয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, মাছে- ফলে ফরমালিন, প্যাকেটজাত খাবারে ভেজাল ও ক্ষতিকারক রংয়ের ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তিতে সব সময় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে উৎপাদনকারি এবং ব্যবসায়িরা। এর বিপরীতে সাধারণ ভোক্তারা সবসময় নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার দাবী করলেও তা যেন অধরায় থেকে যাচ্ছে।
এদিকে চিকিৎসকদের দাবী বিষযুক্ত এবং ভেজাল খাদ্যের ফলে মানুষের শরীরে খুব অল্প সময়ে নানান ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারছেনা বেশিরভাগ পরিবার। টেকপাড়া এলাকার গৃহিনী মমতাজ আরা বলেন, আমার ছেলেকে স্থানিয় একটি কেজি স্কুলে দিয়েছি প্রতিদিন সকাল ৮ টায় স্কুলে নিয়ে যেতে হয়, গত সপ্তাহে দেখছি সে স্কুলে যাওয়ার সময় বমি করছে। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন, আমরা পুরো পরিবার ভয়ে এবং চরম অস্থিরতায় পড়ে যাই ছেলের কি হয়েছে। পরে চিকিৎসক বলেছে তার ফুড পয়েজনিং হয়েছে। মোটকথা খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তার খাবারের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডাক্তার নিজেই কোন ভাল খাবারের নাম বলতে পারেননি।
আইনজীবী এড. শামসুল আলম বলেন,  আমার কলেজ পড়–য়া বোনকে পচন্ড পেট ব্যাথার কারনে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা বলেছে খাবারের কারনে পেটব্যথা হয়েছে। বাইরের খাবার কোনভাবেই খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে পানি জাতীয় খাবার খেতেও খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এখন দেখছি পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের একই সমস্যা হচ্ছে।
আলাপকালে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম বোতলজাত খাদ্যের ৪০%  ভেজাল ও নি¤œমানের আর বাজারে বিভিন্ন সবজিতে ব্যাপকমাত্রার কীটনাশকের অস্থিত্ব দেখা গেছে। ফসল ভেদে কীটনাশকের অস্থিত্ব সহনশীল মাত্রার চেয়ে ৫ থেকে ৩১ গুন বেশি। জনস্ব্যস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড এন্ড সেফটি ল্যাবরেটরি থেকে জানুয়ারি মাসে দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্যবসায়িরা উচ্চমানের তেলের সাথে নি¤œমানের তেল মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছে, এর ফলে এসিডিটি বাড়ছে। ফলে যারা এসব তেল ব্যবহার করছে তাদের আলসারসহ আরো জটিল রোগে ধরা পড়ছে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে সমাজের বেশিরভাগ নি¤œ আয়ের মানুষ এসব খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে। আবার তাদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পুচনু বলেন, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। রাষ্ট্র সেটি নিশ্চিত করতে পারছে না। কারণ মানুষ সচেতন নয়। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য কিন্তু কৃষকরা যখন চাল উৎপাদন করে তখন অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে আর শাকসবজিতেও ইদানিং অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে। আমি একজন দেশের নাগরিক হিসাবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে, কিন্তু আমি সে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি। মূলত আমাদের শরীরে বদহজম, দ্রুত দুর্বল হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, বিকলাঙ্গ সন্তান হওয়া আলসার ক্যান্সার সব বিষযুক্ত খাবারের কারণে। সবকিছু থেকে যদি বাঁচতে হয় তাহলে সুষম খাবার খেতে হবে। আর কৃষকরা যাতে কোন ফসলেই অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার না করে সেদিকে কৃষি বিভাগকে নজর রাখতে হবে। অর্থাৎ সবমানুষকে সচেতন হতে হবে। যেন নিরাপদ খাদ্য গ্রহন করা যায় আইন করে সবকিছু হয় না। মানুষের নিজের বিচার বিবেক থেকে কিছু কাজ করতে হবে।
আলাপকালে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রেজাউল করিম বলেন, ভেজাল ও বিষযুক্ত খাবারের বেশি ভুক্তভোগি হয় শিশুরা। কারন বড়দের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। সে তুলনায় শিশুদের থাকেনা। তাই যখনি তাদের শরীরে কোন ভেজাল খাদ্য যায় সাথে সাথে তার খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শিশুদের দোকানের খাবার পারত পক্ষে পরিহার করা দরকার। বিশেষ করে রং মিশ্রিত খাবার একে বারেই নয়।  আর বাজার থেকে আনা খাবারের মেয়াদ বা গুণগত মান যাচাই করা দরকার। সেক্ষেত্রে শিশুর জন্য ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা করার আহবান জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: