ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে বিএনপিতে সাত নতুন মুখ

অনলাইন ডেস্ক ::

সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা নেই, চট্টগ্রামে এমন প্রার্থীরাই এবার প্রাধান্য পেয়েছে বিএনপি’তে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গতকাল চট্টগ্রামের ১১ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দলটি। যার মধ্যে সাতজন অতীতের কোন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি। নবীনরা মনোনয়ন পাওয়ায় বাদ পড়েছেন অভিজ্ঞ এবং হেভিওয়েটরা।
চট্টগ্রামের অবশিষ্ট পাঁচ আসনের মধ্যে তিনটিই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে শরীক দলকে। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগড়া ও সাতকানিয়া আংশিক)। শরীক দলের বিষয়ে আনুষ্ঠনিক ঘোষণা আসবে আজ। বাকি দুই আসন নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। আসন দুটিতে কারা দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন তা গতকাল ঘোষণা করা হয়নি। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ ও বায়েজিদের আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৮ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গত ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। অবশ্য প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন। যার শুনানি হবে আজ। শুনানিতে মনোনয়নপত্র বৈধ হলে দলীয় প্রার্থী হবেন তিনি। অন্যথায় বিকল্প হিসেবে এগিয়ে আছেন নগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। অবশ্য এম মোরশেদ খানের ‘ভাতিজা’ হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ’ও মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসনে।
এদিকে চট্টগ্রাম-৩ আসনের প্রার্থীর নামও গতকাল ঘোষণা করা হয় নি। এর আগে আসনটিতে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সাংসদ মোস্তফা কামাল পাশা এবং বিএনপি নেতা নুরুল মোস্তফা খোকন। টিএন্ডটি বিল বকেয়া থাকায় মোস্তফা কামাল পাশা’র মনোননয়নপত্র বাতিল করেছিল রিটার্নিং অফিসার। পরে তিনি আপিল করেনে। গত বৃহস্পতিবার শুনানিতে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। দলের চূড়ান্ত মনোনয়নেও এগিয়ে আছেন তিনি।
বহাল আছেন চার সাবেক সাংসদ : অতীতে বিএনপি থেকে সাংসদ হয়েছেন এমন চারজনকে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। এরা হচ্ছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম। এর মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান এবং সরওয়ার জামাল নিজাম তিনবার করে এবং জাফরুল ইসলাম চৌধুরী চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অভিজ্ঞতাই নেই সাতজনের : পূর্বে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি এমন সাতজনকেও প্রার্থী করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে কর্নেল (অব:) মো. আজিম উল্লাহ বাহার, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে জসীম উদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে কুতুব উদ্দিন বাহার, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ডা. শাহাদত হোসেন এবং চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এনামুল হক এনাম।
এর মধ্যে ডা. শাহাদাত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সভাপতি। গত ৭ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্টের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে তাকে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। এছাড়া গত ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র সমাবেশে যোগ দিতে এসে আটক হয়েছিলেন রাঙ্গনিয়া উপজেলা বিএনপি’র একাংশের কুতুব উদ্দিন বাহার। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি।
মীরসরাইয়ের নুরুল আমিন ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাশকতার মামলার আসামী হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদিকে গত ২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগপত্রের কপি জমা দিতে না পারায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে রিটার্নিং অফিসার। অবশ্য আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
২০১০ সালে অবসরের পর বিএনপি’তে যোগ দেন ফটিকছড়ি থেকে মনোননয়ন পাওয়া কর্নেল মো. আজিম উল্লাহ বাহার। মূলত, এরপর থেকেই ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপি’র সবাইকে সাথে নিয়েই প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন।
রাউজানের প্রার্থী জসীম উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘দল আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু করবো।’ রাউজান উপজেলা বিএনপি’তে বিদ্যমান গ্রুপিং নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে কি না জানরেত চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন ধরনের সমস্যা হবে না। দল যেহেতু মনোনয়ন দিয়েছে তাই সবাই মিলেমিশেই কাজ করবে। সবার কাছেই যাব আমি। তবুও কেউ যদি বিরোধিতা করে তাহলে দলই সিদ্ধান্ত হবে।’
আসলাম চৌধুরী’র ভাইয়ের উপর আস্থা: সীতাকুণ্ড আসনে মনোনয়ন পাওয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক চৌধুরী বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর ভাই। গতকাল সন্ধ্যায় ইসহাক চৌধুরী বলেন, ‘দল থেকে আমাকে কল করে নিশ্চিত করেছে। বলেছে, চিঠি নিয়ে আসার জন্য। আমি এখন ঢাকা যাচ্ছি।’
এ আসনে বিএনপি’র প্রথম পছন্দ ছিল আসলাম চৌধুরী। ২০১৬ সালের ১৫ মে গ্রেপ্তার হয়ে এখনো কারাগারে আছেন লায়ন আসলাম চৌধুরী। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারকে উৎখাতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। অবশ্য এ অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে আসছেন তার অনুসারীরা। ঋণ খেলাপী হওয়ার কারণে আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। অবশ্য তার পক্ষে আপিল করা হয়েছে। আজ সেই আপিলের শুনানি করবে নির্বাচন কমিশন। তবে বুধবার তাকে আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে নির্দেশ দেয় আদালত। মূলত এ কারণেই আসলাম চৌধুরীকে প্রার্থী করেনি বিএনপি।
চমক দেখালেন এনাম : চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন দুইজন। এরা হচ্ছেন- দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম। গতকাল চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয় এনামুল হক এনামকেই। দুইবারের সাংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েলকে পাশ কাটিয়ে এনামের মনোনয়ন পাওয়াকে চমক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১/১১ এর সময় থেকেই বিএনপি’র রাজনীতিতে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত হন এনামুল হক। পটিয়া উপজেলা বিএনপি হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য পদে না থাকলেও ছাত্র অবস্থা থেকেই বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ‘কালো দিবস’ পালন করতে গিয়ে বিএনপি’র সমাবেশ গ্রেফতার হয়ে ৫ মাস ৭ দিন কারাবরণ করেন। ২০১৮ সালে ১৫ এপ্রিলও দ্বিতীয়বার কারাবরণ তিনি। এছাড়া দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে এনামুল হক এনাম বলেন, ‘দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আসনটি আমি দলকে উপহার দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রতীক বরাদ্দের পর সবাইকে সাথে নিয়েই নিবার্চনী প্রচারণা শুরু করবো। ইতোমধ্যে সবার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।’
শরীকের তিন আসন : চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক), চট্টগ্রাম ১৫ আসন (লোহাগড়া ও সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে শরীক দলকে। এর মধ্যে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম’, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগড়া ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি জামায়াতের শামসুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে শরীক দল ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হবেন।
অবশ্য হাটহাজারীতে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের সম্ভাবনাও ছিল এ আসনে। কিন্তু ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরবর্তীতে আপিল করলেও শুনানিতে তা নামঞ্জুর করা হয়। অর্থাৎ বাতিল করা হয় মীর নাছিরের মনোনয়নপত্র।

পাঠকের মতামত: