ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সমর্থকদের আনন্দ উচ্ছ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১টি ছাড়া সব আসনে প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে জেলা সদরের বাইরের ৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড রবিবার কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলমকে, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে বর্তমান এমপি আশেকউল্লাহ রফিককে এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বর্তমান এমপি আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এসময় দলীয় প্রার্থীদের হাতে লিখিত পত্রও তুলে দেয়া হয়। এছাড়া বান্দরবানে বীর বাহাদুর, রাঙামাটিতে দীপংকর তালুকদার ও খাগড়াছড়িতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার-৩ আসনটিতে প্রথমে জাপা থেকে সাংবাদিক সন্তোষ শর্মাকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে তিনি সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন এবং এনিয়ে পত্রিকায় একটি মন্তব্য প্রতিবেদনও লেখেন। পরদিন এ আসনটিতে সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলুকে প্রার্থী ঘোষণার কথা জানা যায়। আর এ নিয়ে বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের একটি মন্তব্য প্রতিবেদন রবিবার স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, যেখানে নিজেকে তিনি ‘দুর্ভাগা’ হিসাবে উল্লেখ করেন। সন্ধ্যায় তার সমর্থকেরা রামুতে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং রাস্তার পাশে কলাগাছ রোপন করে দিয়ে এমপি কমলকে মনোনয়ন না দেয়ার প্রতিবাদ জানায়।

২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ আসনটিকে প্রথমে কানিজ ফাতেমা মোস্তাককে মনোনয়ন দেয়া হলে কমলের সমর্থকেরা একইভাবে রাস্তার পাশে কলাগাছ রোপন করে প্রতিবাদ জানায়। পরে খেলাপী ঋণগ্রহীতার জিম্মাদার হিসাবে কানিজ ফাতেমার নাম তালিকাভূক্ত থাকায় পরে কমলকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কমল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কমল বিপুল ভোটে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ওই নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল।
চকরিয়া-পেকুয়ায় জাফর আলম : চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার জাফর আলম। গতকাল রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়নের চিঠি হাতে পাওয়ার পর অবসান ঘটে সকল জল্পনা-কল্পনার।
জাফল আলমের মনোনয়ন পাওয়ার খবরে নির্বাচনী এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়ায় আনন্দ মিছিল বের করে তারা। অনেক স্থানে বিতরণ করা হয় মিষ্টিও। চকরিয়ায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে।
প্রসঙ্গত-মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী জাফর আলম ইতোপূর্বে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় অবতীর্ণ হচ্ছেন জাফর আলম।
রাতে আলহাজ জাফর আলম বলেন, দলের কাছে মনোনয়ন অনেকেই চেয়েছেন, সেই তালিকায় আমিও ছিলাম। সবকিছু হিসেব-নিকেশ করে আমাকে মনোনয়ন এবং নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছেন মহাজোট নেত্রী ও দলের প্রধান শেখ হাসিনা। অতএব আমি আশা করি, সকল ধরণের ভেদাভেদ ভুলে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করবেন নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে। কারণ আগামী নির্বাচন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বাঁচা-মরার লড়াই, এটিই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে।
মহেশখালীতে আশেক উল্লাহ : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে সাবেক সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। গতকাল সকালেদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফে বদির স্ত্রী শাহীনা : টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কঙবাজার-৪ আসনে (টেকনাফ-উখিয়া) আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া শুরু হয়েছে। দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ মনোনয়নপ্রাপ্তদের চিঠি দেন।
বান্দরবানে বীর বাহাদুর : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের হাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত চিঠি আওয়ামী লীগ সাধারণ ওবায়দুল কাদের তুলে দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের হাতে।
বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি একেএম জাহাঙ্গির বলেন, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগে পক্ষ থেকে চূড়ান্ত একক প্রার্থী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বীর বাহাদুরের নাম পাঠানো হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বীর বাহাদুরকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও নৌকার প্রার্থী হিসাবে পার্বত্য বীরকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
বীর বাহাদুর উশৈসিং বান্দরবান ৩০০ নং আসন থেকে পরপর ৫ বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চম বারের মত সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাঙামাটিতে আবারো দীপংকর : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটি ২৯৯ নং আসনে আ’লীগ থেকে আবারো মনোনয়নের টিকিট পেলেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আ’লীগের সদস্য দীপংকর তালুকদার। রোববার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় আ’লীগের কার্যালয় থেকে এক চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানান রাঙামাটি জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। তিনি জানান- রাঙামাটিতে আ’লীগ থেকে নির্বাচন করার জন্য দীপংকর তালুকদারের কোন বিকল্প নেই। আর শেখ হাসিনা সেই বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে দীপংকর তালুকদারকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞতা জানান জেলা আ’লীগের এ নেতা।
খাগড়াছড়িতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির ২৯৮ নং সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। গতকাল সকালে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের নতুন ভবন থেকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চিঠি গ্রহন করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মংসেপ্রু চৌধুরী অপু ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি মো. নুরুল আযম। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে জন-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে দাবি করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মংসেপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, আমরা যেকোন মুল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার প্রতিদান দেব।

পাঠকের মতামত: