ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অবসরপ্রাপ্ত সচিব দেলোয়ার হোসেন অভিমানেই আত্মহত্যা করেছেন

Hero-News-Pic-300x225নিউজ ডেস্ক কক্সবাজার :::

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (৬২)। তিন গত ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজার অবস্থান করছেন। শহরের কলাতলীস্থ বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে মাসিক রুম নিয়ে তিনি একা অবস্থান করতেন। তিনি যেখানেই যেতেন সবার সাথে মিলে-মিশে আনন্দের মধ্য দিয়ে থাকতেন। চেনা-অচেনা সকলের সাথে কথা বলতেন, আড্ডা দিতেন, টাকা খরচ করে আয়োজন করে খাওয়াতেন। সব সময় চেষ্টা করতেন নিজেকে আনন্দের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে। এর পরেও তার মধ্যে দেখা যেত চাপা কষ্ট। যা তিনি কারো সাথে শেয়ার করতে চাইতেন না। সর্বশেষ তিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে সবাইকে জানিয়ে দিলের তার কষ্টের ফল। তিনি হোটেলের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সাথে গামছা পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে আত্মহত্যা করায় সবাই হতবাক ও হা-হু তাশ করছেন। এমনটাই জানা যায়, তার সাথে সময় কাটানো লোকজনের সাথে কথা বলে।
দেলোয়ার হোসেনের আত্মহত্যার পরে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে একদিন পার হয়ে গেলেও কোন আত্মীয়-স্বজনের খবর না পাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার বিকালে আঞ্জুমানে (পৌরসভার নিয়ন্ত্রানাধিন বেওয়ারিশ লাশ দাফন) লাশ দাফন করা হয়। পরে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) তার আত্মীয়-স্বজন কক্সবাজার আসেন। আর কবর জিয়ারত করে ঢাকায় ফিরে যান।
পুলিশ ও আত্মীয়-স্বজনের সূত্রে জানা যায়, নিহত মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব। তিনি ঢাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত সোনা মিয়া। তিনি ১ ছেলে ২ মেয়ে’র জনক। পরিবারের অবহেলার কারণেই কক্সবাজার এসে একা অবস্থান করতেন। সর্বশেষ আত্মহত্যা করেছেন এই অবহেলা’র কারনে।
গত সোমবার ২৯ ফেব্রুয়ারী শহরের কলাতলীস্থ আবাসিক হোটেল সী হ্যাভেন গেষ্ট হোমের নীচ তলার ১০১ নাম্বার রুমে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার সদর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, অবসর প্রাপ্ত সচিব দেলোয়ার হোসেন এর মৃতদেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে আঞ্জুমানে করব দেওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি তার দায়িত্বে ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে তিনি হোটেলের রুমের দরজা ভিতর থেকে লাগিয়ে ফ্যানের সথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যার ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, স্বজনেরা স্বীকার না করলেও ধারণা করা হচ্ছে পারিবারের সাথে অভিমান করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই অভিমানের কারনে তিনি পরিবারের কাছ থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করছিলেন। যার কারনে তিনি মারা যাওয়ার ১দিন পরেও কোন আত্মীয়ের-সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে মৃতদেহটি শহরের গোলদিঘির পাড়স্থ বড় করবস্থানে আঞ্জুমানের অধিনে কবর দিতে হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার সকালে তার একমাত্র সন্তান রাজিব, ডেপুটি সেক্রেটারি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রাণালয়ের খোরশেদ ইকবাল রাজিবসহ কয়েকজন আত্মীয় কক্সবাজার আসেন। তারা দেলোয়ার হোসেনের কবর জিয়ারত করেন এবং কবরের চারপাশে বেড়া দিয়ে সংস্কার করতে দেন।
ঢাকা থেকে আসা তার আত্মীয়স্বজনের সাথে বড় কবরস্থানে গিয়েছিলেন, কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আসলাম হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তুষার আহম্মদ, এসআই শহিদুল ইসলাম, আঞ্জুমানের দায়িত্বে থাকা নুর আলমসহ একদল পুলিশ।
কলাতলীস্থ আবাসিক হোটেল সী হ্যাভেন গেষ্ট হোমের ম্যানেজার মুকবুর হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন জানুয়ারীর ২ তারিখ থেকে ২ মাসের জন্য হোটেলের নীচ তলার ১০১ নাম্বার রুমটি ১২ হাজার টাকা দামে মাসিক ভাড়া নিয়েছেন। তিনি ওখানে একাই থাকতেন। তাকে রুম নিয়ে দেওয়ার সময় মিটুন নামে এক ভদ্রলোক এসেছিলেন। সাথে এক নারীও ছিলেন। ওই সময় মিটুন বলেছিলেন কোন সুবিধা-অসুবিধা হলে তাকে ফোন করতে। আর তাদের রুম নিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন পাশ্ববর্তী ব্লু পার্ক আবাসিক হোটেলের আয়া মরিয়ম। আত্মহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে তিনি রুম থেকে বের হলেও ঘটনার দিন সোমবার দুপুর পর্যন্ত তার রুমের দরজা বন্ধ ছিল। পরে হোটেলের বয়’রা রুমের দরজা ভেঙ্গে দেখতে পান তিনি ফ্যানের সাথে গামচা প্যাঁচিয়ে মৃত অবস্থায় ঝুলে আছেন দেলোয়ার হোসেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
ম্যানেজারের কথার সূত্র ধরে মিটুর সাথে যোগাযোগ করলে রুম নিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। আর বলেন, “দেলোয়ার সাহেব আমার পরিচিত। ঠিকাদারির সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয়। তিনি অনেক বড় সাহেব তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় সর্ম্পকে ও মৃত্যুর কারণ সর্ম্পকে আমি জানিনা”।
ব্ল পার্লে’র আয়া’র মরিয়ম আক্তার জানান, দেলোয়ার হোসেনকে পাশ্ববর্তী আবাসিক হোটেল সী পার্ল ওয়ান থেকে সী হ্যাভেনে রুম নেওয়ার সময় সহযোগিতা করেছেন। আর ওই সময় দেলোয়ার হোসেনের সাথে মিঠুন নামে এক ভদ্রলোককে দেখেছেন। তার সাথে একজন নারীও ছিলেন।
পাশ্ববর্তী আবাসিক হোটেল সী পার্ল এর ম্যানেজার মহিউদ্দিন জানান, দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘ দিন যাবত কক্সবাজার অবস্থান করছেন। গত কয়েক বছর ধরে দেলোয়ারকে তিনি দেখে আসছেন।  তবে মাঝে-মধ্যে বেশ কিছুদিনের জন্য হাওয়া হয়ে যেতেন তিনি। তিনি খুবই সাংস্কৃতিক মনা মানুষ। গত জানুয়ারী’র ২ তারিখে নিজ খরচে তিনি গানের পার্টির আয়োজন করেছিলেন। তিনি গত কয়েক মাস সী পার্ল ওয়ানে ছিলেন। পরে সী হ্যাভেনে রুম নেন।
দেলোয়ার হোসেনের আত্মহত্যার ব্যাপারে তার একমাত্র সন্তান রাজিবে’র সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজী হননি। শুধু বলেছেন তার মানসিক অবস্থা ভাল নেই কথা বলবেননা। জানা যায়, রাজিব মোবাইল কোম্পানী টেলিটকের কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে, কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার সাভারে। তিনি স্বেচ্ছায় অবসর প্রাপ্ত হন। প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেই মারা গেছেন অবসর প্রাপ্ত সচিব দেলোয়ার হোসেন। তিনি কেন আত্মহত্যা করেছেন তা এখনও  জানা যায়নি। – See more at: http://www.dainikcoxsbazar.net/?p=83928#sthash.hmIm7xJE.dpuf

পাঠকের মতামত: