ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার-৪ আসন বদির স্ত্রীকে প্রার্থী ‘ঘোষণায়’ হতাশ আ. লীগের তৃণমূল

অনলাইন ডেস্ক ::   একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে দলের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী শাহিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করছে। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদেরের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা এসেছে। এর পরপরই এই নির্বাচনী এলাকার ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টাতে শুরু করেছে। হতাশা ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মাদক কারবারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং নানা কর্মকাণ্ডে দেশব্যাপী সমালোচিত ও বিতর্কিত। এ কারণে সাধারণ ভোটারসহ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল, দল এবার বদির পরিবারের কাউকে নৌকার প্রার্থী না করে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাকে প্রার্থী করবে। কিন্তু বদির স্ত্রী শাহিনা চৌধুরীকে প্রার্থী করার ঘোষণা আসায় নির্বাচনী এলাকা উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে নীরব হয়ে গেছে। তারা এত দিন বদির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিল, পাশাপাশি বদির পরিবারের বাইরে সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে আগেভাগে মাঠে সরব ছিল। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ দায়িত্বশীল অনেক নেতাই বদি পরিবারের পক্ষে ভোট করবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

তৃণমূলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য বদি ইয়াবা সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত। তিনি ছাড়াও তাঁর পরিবারের আরো চার সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক কারবারির তালিকার শীর্ষে রয়েছেন।

বদির বিরুদ্ধে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। তারা বলছে, বদিকে বাদ দিয়ে তাঁর স্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া মানে বদিকেই মনোনয়ন দেওয়া। বরং স্ত্রী সংসদ সদস্য হলে বদি আরো বেপরোয়া হয়ে যাবেন। কারণ তখন তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ‘বদির স্ত্রীকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণায় আমরা হতাশ, অবাক হয়েছি। কারণ, বদির স্ত্রীর সঙ্গে দলের কোনো স্তরের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া তিনি রাজনৈতিকভাবেও অপরিপক্ব এবং ভোটারদের কাছে অপরিচিত। আমাদের এত দিনের দাবি ছিল, বদি এবং তাঁর পরিবারের বাইরে দলের ত্যাগী বা তরুণ নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে নৌকার প্রার্থী দেওয়ার। কিন্তু দল শেষ মুহূর্তে কেন বদির পরিবারের লোককে আবারও নৌকার প্রার্থী করেছে তা আমরা ভেবে পাচ্ছি না।’

নুরুল হক বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। আমাদের দলও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এত ঢাকঢোল পিটিয়ে দল আবারও একটি মাদকসংশ্লিষ্ট পরিবারের লোককে নৌকার প্রার্থী করায় আমাদের এত দিনের আশা চোরাবালিতে পড়েছে। আমরা আমাদের নেত্রী, মানবতার মা শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন করছি যে বদি পরিবারকে বাদ দিয়ে এবার দলের ত্যাগী ও তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় প্রার্থী করা হোক।’

কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফের আসনটি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল আসন। ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে এখানে। এই এলাকায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে দলের প্রাথমিক সদস্য পদও পূরণ করেননি—এমন একজন অরাজনৈতিক ও অশিক্ষিত মহিলা কিভাবে এ জনগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়ে এত বিশাল চাপ সামাল দেবেন?’

স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এবার বদি পরিবারের লোককে নৌকার প্রার্থী করা হয় তার পক্ষে আমরা ভোট করব না। সংসদ সদস্য বদি গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে টেকনাফের ছয়টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। চারটিতেই তিনি নৌকাকে ডুবিয়েছেন।’

ছাত্রলীগের এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি এমপি বদি একাই চারটি নৌকাকে ডুবাতে পারেন, তাহলে আমরা তাঁর একটি নৌকা ডুবালে দোষের কী?’

বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও তাঁর স্ত্রীসহ দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়েছিলেন উখিয়া ও টেকনাফের বেশ কয়জন ত্যাগী নেতা। তাঁদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিক মিয়া, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর, তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধনা দাশ গুপ্তা, উখিয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও মন্ত্রিপরিষদসচিব শফিউল আলমের ছোট ভাই শাহ আলম ও শিল্পপতি মো. ইয়াহিয়ার ছেলে তাহা ইয়াহিয়া উল্লেখযোগ্য।

পাঠকের মতামত: