ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিএনপি-জামায়াতের বন্দি ১০ নেতা নির্বাচন করতে চান

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, দুর্নীতি ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি  ১০ জন হাজতি আসামি আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র ফরমে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। হাজতি আসামিদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণের ইচ্ছাপোষণকারী ১০ জনের সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতা।

বিএনপি ও জামায়াত এসব নেতাকে মনোনয়ন দিলে তাঁরা মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে পারবেন বলে মনে করছেন।

কারাগারে বন্দি থাকলেও নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছাপোষণকারী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। নিজেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে প্রচারকারী আসলাম চৌধুরী রাষ্ট্রদ্রোহসহ একাধিক চেক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। তিনিই কারাগারে বসে নির্বাচন কমিশন থেকে ফরম সংগ্রহ করেছেন।

আসলাম চৌধুরী ছাড়াও অন্য বিএনপি নেতাদের মধ্যে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, বাঁশখালীর বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী, রাঙ্গুনিয়ার অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন, প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, মিরসরাইয়ের জাসাস নেতা শহিদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরীও ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা দুজনই চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জামায়াতে ইসলামীর দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।

হাজতি বন্দিদের মধ্যে ৯ জন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক। সদ্য বদলি আদেশ পাওয়া এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কারাগারে হাজতি বন্দি নেতারা জেলকোড অনুসরণ করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব ফরম কারাগার থেকে স্বাক্ষর করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপি দলীয় এবং হাজতি বন্দি আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাজতি বন্দিরা এখনো সাজাপ্রাপ্ত নয়। তাই তাঁদের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। সেই কারণে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকার পরও জেলবিধি মেনে বিএনপি নেতারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এখন দলীয়ভাবে যদি তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলতে তাদের আইনগত কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের সরকার রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়েছে। ন্যায় বিচারে আসামিরা মুক্তি পাবে বলে আশা করছি।’

কারাগারে থেকে ভোটের মাঠে কতোটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হড়ে তোলা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধানের শীষ তুমুল জনপ্রিয় প্রতীক। নেতারাও স্ব স্ব এলাকায় জনপ্রিয়। এখন দল তাদের মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতা-কর্মীরাই ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করবে। তবে এসব দলীয় সিদ্ধান্ত।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জেএম শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক কয়েকজন মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষরের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন ফরমগুলো কারাগারে যাবে, সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ফরমে স্বাক্ষর করবেন প্রার্থীরা। তারপর আইনগতভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: