ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লামায় মাতামুহুরী নদী ওপর কাঠের সেতু

লামা প্রতিনিধি ::    বান্দরবানের লামা উপজেলা দিয়ে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদীর মেরাখোলা-মিশনঘাট পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে কাঠের সেতু। স্থানীয় জনগণের যোগাযােগের সুবিধা চিন্তা করে খেয়াঘাট ইজারাদার হাবিবুর রহমান লাখ টাকা খরচ করে দীর্ঘ প্রায় ৮৫ মিটার কাঠের সেতুটি নির্মাণ করেন। মঙ্গলবার সকালে এ সেতুটি উদ্বোধন করেন সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন। সেতুটি উদ্বোধনের পর উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন লামা সদর ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগের পথ সুগম হয়েছে। এলাকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে এপার ওপার রিক্সা, মোটর সাইকেল, ভ্যান চলাচলের মাধ্যমে। কাঠের সেতুটি নির্মাণ করে এলাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইজারাদার হাবিবুর রহমান।

সূত্র জানা যায়, তিন দিক নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন লামা সদর ইউনিয়ন। দীর্ঘদিন ধরে এ ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। তাও শুষ্ক মৌসুমে কোনমতে নদী পাড়ি দিতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে তা হয়ে ওঠে একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ সময় নদীতে থাকে পানি ভর্তি ¯্রােতের টান। ফলে বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পড়তে হত চরম ভোগান্তিতে। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির আন্তরিক প্রচেষ্টায় নদীর রাজবাড়ী-মেরাখোলা পয়েন্টে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে এ ব্রিজের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই ফাঁকে শিক্ষার্থী ও জনগনের সুবিধার কথা চিন্তা করে নিজ উদ্যোগেই কাঠের সেতু নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন খেয়াঘাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান। মেরাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার দত্ত, স্থানীয় আজিজুর রহমান, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল মালেক জানান, মাতামুহুরী নদীতে এই কাঠের সেতুটি নির্মাণের ফলে মেরাখোলা, ছোটবমু, বইল্যার চরসহ আশপাশের গ্রামের সড়কগুলোতে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিয়নের প্রায় ৩-৪ হাজার কৃষি পরিবারের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া নদীতে কাঠের তৈরি এই সেতুটি নির্মাণের ফলে তাদেরকে আর নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছেনা। পায়ে হেঁটেই নদী পার হতে হচ্ছে তারা।

এ বিষয়ে খেয়াঘাট ইজারাদার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নৌকা যোগে নদী পার হওয়া কষ্টকর। স্কুল মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরকে নদী পাড়ি দিতে দীর্ঘক্ষণ নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে শিক্ষার্থীরা যথা সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে পারেনা। তাই কিছু খরচ হলেও নিজ উদ্যোগে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করি। এটি নির্মাণের ফলে আগামী ৬মাস অন্তত পায়ে হেঁটে চলাচলের পাশাপাশি মোটর সাইকেল ও টমটম যোগেও লামা সদর ইউনিয়নে যাতায়াত করতে পারবে স্থানীয়রা। সেতুটি নির্মাণ করতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ি-মেরাখোলা পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণে দু’পারের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় শিঘ্রই এ দাবী পুরণ হতে চলেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নির্মাণাধীন গার্ডার ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হলে পৌরসভা ও লামা সদর ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে। সরাসরি গাড়ি যোগেই সদর ইউনিয়নে আসা-যাওয়া করা যাবে। এতে ভোগান্তি আর থাকবেনা।

মাতামুহুরী নদীর ওপর কাঠের ব্রিজ নির্মাণের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপির একান্ত প্রচেষ্টায় নির্মাণাধীন গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করি আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হলেই সরাসরি উপজেলা সদরের সাথে ইউনিয়নে জনগনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে উৎপাদিত ফসল সহসা বাজারে নিতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে সদর ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির অবসান হবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: