ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লোহাগাড়ায় পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

লোহাগাড়া প্রতিনিধি :: লোহাগাড়ায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। উপজেলার সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ ইটভাটা স্থাপন, পাহাড় কাটা ও ফসলি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি মাটি ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার, বালু উত্তোলন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ বসতি স্থাপনই পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। তবে এই বিষয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদিরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ করেছেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে সর্বমোট ২১টি ইটভাটা রয়েছে। ইউনিয়নটি পার্বত্য বান্দরবান জেলার বনাঞ্চল ঘেষে অবস্থিত। এখানে বিপুল পরিমাণ বনভূমি রয়েছে। ভাটার নির্গত ধোঁয়ায় বনাঞ্চলের পশুপাখিরা আবাস হারাচ্ছে। খাদ্য ও আবাস হারিয়ে বন্যহাতিরা লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে ইউনিয়নের কালোয়ার পাড়ার উত্তর পার্শ্বে আদর্শ গ্রাম সংলগ্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে প্রভাবশালীরা ইটভাটা নির্মাণ করার সময় লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ্মাসন সিংহের নেতৃত্বে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত লক্ষাধিক ইট, ৪টি ডাম্প ট্রাক ও ২ স্কেভেটর জব্দ করেছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালিত হয় বলে জানা যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আসলাম জানান, এলাকার পদুয়া তেওয়ারীখীল, কলাউজান, পশ্চিম কলাউজান, চরম্বার বিবিবিলা, চুনতি অভয়ারণ্য, বড়হাতিয়া বায়তুশ শরফ, লোহাগাড়া দরবেশহাট সংলগ্ন বোয়ালিয়াকুল, কলাউজান কালীবাড়ি সংলগ্ন স্থানে অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। তিনি বলছেন, ভাটার মালিকরা জেলা প্রশাসক বরাবরে দরখাস্ত দিয়ে ভাটার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এসব ইটভাটায় অসংখ্য বহিরাগত শ্রমিক কাজ করছেন। এই শ্রমিকদের তথ্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিকদের প্রতি আদেশ দিয়েছেন বলে লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। পুলিশের ধারণা এসব ভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা কিংবা জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত। তারা আগামী নির্বাচনে সহিংসতা চালাতে পারে বলে পুলিশ এ আদেশ জারি করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদুয়া ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন স্থানে বার আউলিয়া কলেজের সামনে দক্ষিণ পার্শ্বে তেওয়ারীখিল সংলগ্ন স্থানে ধানি জমির উপর স্থাপিত ইটভাটায় ব্যাপকহারে ফসলি জমির উপরিভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। লোহাগাড়া টংকাবতী খালের উপর অবস্থিত রাবারড্যাম সংলগ্ন জমিতে কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। ফলে রবি মৌসুমে কিংবা ধান আবাদের সময় ব্যাপকহারে পানি শোষিত হয়।
ফলে চাষাবাদে বিপর্যয় ঘটে বলে লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিম হোসেন জানান। এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হচ্ছে না। এলাকার টংকাবতী, হাঙ্গর, ডলু, সরই, হাতিয়া, পাগলি প্রভৃতি খালে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে বালি উত্তোলন হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে এমচরহাট কেয়াজুপাড়া সকলের হাসনাভিটা এলাকায় সরইখালের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে। টংকাবতী খালের রাজঘাটা এলাকায় আঁড়ি বাঁধ দিয়ে স্রোত পরিবর্তন করে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। ফলে রাজঘাটা এলাকার জনসাধারণ আগামী দিনে ভাঙনের আশংকায় রয়েছে। চুনতি রেঞ্জ অফিসের অধীন সাতগড় বনবিটে পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ বসতি স্থাপন করছেন প্রভাবশালীরা।
অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তা একর প্রতি নির্দিষ্টহারে টাকা আদায় করে বসতি স্থাপনকারীদের অনুমতি দিচ্ছেন। তবে বিষয়টি সাতগড় বিট কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ অস্বীকার করেছেন। লোহাগাড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে বলে এলাকাবাসীরা উপজেলা প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে উপজেলা প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান এ ব্যাপারে তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান।

পাঠকের মতামত: