ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় ৫০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন

উখিয়া প্রতিনিধি ::
উখিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল, সুপারির রাজধানী হিসাবে খ্যাত জালিয়াপালং ইউনিয়ন ছাড়াও অন্য চারটি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় হাজারেরও অধিক হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি কেনাকাটা ও সুপারির চালান তৈরির জন্য প্রক্রিয়াজাত করণ করতে গিয়ে সুপারি ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে স্থানীয় বাজারে সুপারির চাহিদার অন্যদিকে ৮ লাখ রোহিঙ্গার বাড়তি চাহিদার কারণে এ মৌসুমে সুপারি চাষীরা উৎপাদিত সুপারি বিক্রি করে বেশ লাভবান হতে দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য ফসলের চাইতে সুপারি চাষাবাদ লাভবান ব্যবসা হিসাবে উপকূলীয় এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে সুপারি বাগান করেছে। সুপারি গাছ একবার রোপন করলে পরবর্তীতে তেমন আর কোন পরিচর্যা বা সুপারি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ভার বহন করতে হয় না। কোন প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই সুপারি বাগান ৩০/৩৫ বছর পর্যন্ত বিদ্ধমান থাকে বলে জালিয়াপালং ইউনিয়নের একজন পেশাদার সুপারি বাগান ব্যবসায়ী কলিমুল্লাহ সওদাগর জানিয়েছেন। তিনি জানান, উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে কৃষকেরা বেশি পরিমাণ লাভবান হচ্ছে। সুপারি বাগানে পোকা মাকড় ও কোন প্রকার রোগ বালাই সহজে আক্রমন করতে পারে না বিধায় সুপারি চাষীদের সুপারি বাগান নিয়ে কোন রকম টেনশনে থাকতে হয় না।
চলতি মৌসুমে সুপারি বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার সোনারপাড়া, উখিয়া সদর দারোগা বাজার, কোর্টবাজার, মরিচ্যাবাজার, বালুখালী বাজারসহ এলাকার আনাচে কানাছে গড়ে উঠা ছোট বড় হাটবাজারে জমজমাট সুপারি কেনা কাটা চলছে। উখিয়া সদরের সুপারি ব্যবসায়ী আসমত আলী জানান, উখিয়ায় উৎপাদিত ২৫ ভাগ সুপারি পানির হাউজে অথবা পানি ভর্তি ড্রামে ভিজিয়ে রাখা হয়। ৩ মাস পর ওই সুপারি ভিজা সুপারি হিসাবে পরিণত হয়ে তার কদর আরো বেড়ে যায়। এরকম বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তারা প্রতি মৌসুমে লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার সুপারি পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখেন মৌসুমে বিক্রি করার জন্য। বাদ বাকী ২৫ ভাগ সুপারি স্থানীয় ভাবে বাজার জাত হয়ে থাকে। উদ্ধৃত ৫০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, অন্যান্য জেলার সুপারির চাইতে উখিয়ার সুপারি গুনগতমান সম্পন্ন। যে কারণে এখানকার সুপারি ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন। স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, বর্তমানে উখিয়ার হাটবাজারে ৮০টি সুপারির (একপন) দাম হাকা হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। সুপারির এমন মৌসুমে দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু পাইকারী ব্যবসায়ীরা সুপারির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারির গাছে গাছে ফুল আসে। এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারির পুরোপুরি পাক ধরতে কার্তিক অগ্রহায়ন মাস চলে আসে। এসময় সুপারির ভরা মৌসুম। মৌসুমের শুরুতেই ভাল দাম পাওয়ার কারণে অনেকেই আধা পাকা সুপারি বাজারে বিক্রি করতে দেখা গেছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের সুপারি চাষী শামশুল আলম, এখলাস কবিরসহ আরো বেশ কয়েকজন চাষীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, সুপারি গাছের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষনে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতা ও নিয়মিত তদারকির কারণে কোন রোগ বালাই ছাড়াই সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে।
সোনারপাড়া বাজারে পাইকারী সুপারি ব্যবসায়ী ছৈয়দ হোছন জানান, চলতি মৌসুমে উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শরিফুল ইসলাম ও উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ শাহজাহান জানান, বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। তারা জানায়, এখানকার মাটি, আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি বাগানের মধ্য দিয়ে এখানকার অধিকাংশ হতদরিদ্র কৃষক আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে।

পাঠকের মতামত: