ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্রগ্রাম কারাগারের চিরচেনা সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে, সোহেল রানার ঘটনার পর নানা পদক্ষেপ

নিউজ ডেস্ক ::    চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের চিরচেনা সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। সোহেল রানার ঘটনার পর নানা পদক্ষেপ নেয়ায় এ পরিবর্তন এসেছে। শুধু বাইরে নয়, ভেতরের অনিয়ম আর দুর্নীতিও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মাদক ও মোবাইল বাণিজ্যও নেই। সবকিছু মিলে চট্টগ্রাম কারাগার এখন নিয়ম মেনে চলছে। সরেজমিন অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে উক্ত খবর পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা মাত্র ১৮৫৩ জন হলেও গতকালও বন্দি ছিল সাত হাজারের কাছাকাছি। ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি বন্দি থাকার সুযোগে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির লাগামহীন কর্মকাণ্ড চলে কারাগারের ভেতরে-বাইরে। বন্দিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হয়। একজন বন্দির কারাগারে প্রবেশ থেকে বের হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। বন্দিদের নির্যাতন এবং কত কায়দা করে টাকা নেয়া হয় তা বাইরে থেকে কল্পনা করাও কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য কারামুক্ত অনেকেই। ঘাটে ঘাটে টাকা আদায় করা হলেও বন্দিরা অসহায়। গোসলের জন্য পানি, খাবার, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাতসহ সব ক্ষেত্রে টাকা প্রদান বাধ্যতামূলক। ‘স্বজনদের সাক্ষাতে কোনো ফি নেই’ এমন কথা কারাগারের সামনে সাইনবোর্ডে লিখা থাকলেও সাক্ষাৎপ্রার্থী স্বজনদের কাছ থেকে ২০০ টাকা ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়। ভিআইপি সাক্ষাত নামে নিজেদের অফিসে বন্দিদের সাক্ষাতকার ব্যবস্থা করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। এছাড়া সুস্থ বন্দিকে অসুস্থ দেখিয়ে কারা হাসপাতালে রাখার সুবিধার জন্য দিতে হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। একটু শান্তিতে নিজের খাবারটুকু খাওয়া এবং রাতে ঘুমানোসহ নির্দিষ্ট কিছু সুবিধার জন্য সপ্তাহে বন্দিদের গুণতে হয় ন্যূনতম ২ হাজার টাকা। এভাবে প্রতি মাসে গড়ে চার কোটি টাকার বাণিজ্য চলে কারাগারে। জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে নগদ, এফডিআর ও ব্যাংক চেকে প্রায় ৫ কোটি টাকাসহ আটকের পর গোয়েন্দা তৎপরতায় কারাগারে বহু অনিয়ম বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজনের সাথে বন্দিদের সাক্ষাতেও কড়াকড়ি করা হয়েছে। ভেতরে ক্যান্টিনে খাবারের দাম কমিয়ে দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে অধিকাংশ সুস্থ মানুষদের সরিয়ে রোগীদের আনা হয়েছে।
গতকাল সাক্ষাতপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সাক্ষাৎপ্রার্থী শাহেনা বেগম জানান, জেলার ধরা পড়ার পর থেকে আর টাকা নিচ্ছে না। কিন্তু কড়াকড়ি খুব বেশি। তিনি তার স্বামীর উদ্ধৃতি বলেন, ভেতরের নিয়মগুলো এখন আর নেই। সবার মাঝে বাড়তি সতর্কতা। কারাগারের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এই পাল্টে যাওয়াটা ধরে রাখা গেলেই সমাজ উপকৃত হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে সোহেল রানা বিশ্বাসের কাছে পাওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক চেক তিনটি খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারাগারে খাবার সরবরাহকারী হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য সোহেল রানাকে এ ঘুষ দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

পাঠকের মতামত: