ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

হুমকিতে চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ, গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে

untitled-18_196606চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :::

নির্মাণ করা হবে আউটার রিং রোড। তাই কাটা হচ্ছে চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধের ওপর থাকা ২৫ হাজার গাছ। কথা ছিল, এসব গাছ কাটার পাশাপাশি নতুন করে রোপণ করা হবে ৫০ হাজার। তবে তা করা হচ্ছে না। উল্টো গাছ কাটার জন্য যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এখন গাছ কাটা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি
সীমাজুড়ে। দুর্বৃত্তরাও কেটে নিচ্ছে গাছ। এতে চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধই এখন পড়েছে হুমকিতে। অথচ এ বাঁধের কারণেই টিকে আছে চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর, কাস্টম হাউস, ইপিজেড, ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

 
পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধে প্রায় ২০ মিটার প্রস্থজুড়ে গাছ কাটার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায়, এ সীমার বাইরেও কাটা হচ্ছে গাছ। বেড়িবাঁধের পাশে সর্বোচ্চ ২৪ মিটার পর্যন্ত স্থানে গাছ কাটার কথা থাকলেও ৩০ থেকে ৩৫ মিটারজুড়ে কাটা হচ্ছে গাছ। প্রকল্পের বাইরে থাকা পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন এলাকা থেকেও গাছ কাটছে দুর্বৃত্তরা। কেটে ফেলা গাছের মধ্যে আছে আকাশমণি, রেইনট্রি, মেহগনি, নিম, অর্জুন, বহেরা, জাম, গামার, ঝাউসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

এ প্রসঙ্গে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এই বেড়িবাঁধ দিয়ে রক্ষা হচ্ছে পুরো শহর। এখানে নির্বিচারে গাছ কাটা হলে শহর হুমকির মুখে পড়বে। রিং রোড প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাছ কাটা হচ্ছে কি-না, তা তত্ত্বাবধান করার কথা বন বিভাগের।’ জানা গেছে,
পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আউটার রিং রোড হবে। সড়কটি নির্মাণের জন্য ৯০ দশমিক ৩৬১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে উপকূল সড়কের দৈর্ঘ্য ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ২০ দশমিক ৫ মিটার থেকে ২৪ দশমিক ৫ মিটার। এ অংশে সড়কের উচ্চতা বর্তমানের তুলনায় তিন মিটার বাড়ানো হবে। এ ছাড়া দুই ফিডার সড়কের একটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার এবং অন্যটির দৈর্ঘ্য হবে দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর এ আউটার রিং রোড নির্মাণে অর্থ সহায়তা দেবে জাইকা। এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের জন্য ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাইকার চুক্তি হয়। আর ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চউক।
আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা যাতে অতিরিক্ত গাছ কাটতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি গাছে নম্বর দেওয়া হয়েছে। যারা সরকারি গাছ কেটে নিচ্ছে, তাদের চি?িহ্নত করবে বন বিভাগ।’ নতুন চারা রোপণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বন বিভাগকে। এ জন্য বন বিভাগকে ২০ হাজার গাছের দাম ও ৫০ হাজার নতুন চারা বাবদ প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা দিয়েছেন তারা। দরপত্র আহ্বান করে গাছগুলো ৯০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা।

বন বিভাগ জানায়, প্রকল্প এলাকায় তাদের গাছ রয়েছে ২০ হাজার ২৪৮টি। আর ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছ রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। প্রতিটি গাছে নম্বর থাকলেও এখন কাটতে দেখা গেছে প্রকল্প এলাকার বাইরের গাছও। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেটে ফেলা হয়েছে অনেক গাছ। ১৯৯৭ সালে উপকূলীয় সামাজিক বনায়নের আওতায় শহর রক্ষা বাঁধে এসব গাছ লাগানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বন বিভাগের উপকূলীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নির্দিষ্ট নম্বরের বাইরে কারও গাছ কাটার সুযোগ নেই। ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছ হলেও স্পর্শকাতর স্থান হওয়ায় গাছ কেটে পরিবহনের আগে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। প্রকল্প এলাকার বাইরে দুর্বৃত্তরা গাছ কাটলে ব্যবস্থা নেব।’ নতুন গাছ লাগানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আউটার রিং রোড নির্মাণকাজ যে বছর যতটুকু শেষ হবে, ওই বছর ততটুকু স্থানে নতুন চারা রোপণ করব আমরা। দুর্বৃত্তরা যাতে জায়গা দখল করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক আছে বন বিভাগ।’

পাঠকের মতামত: