ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

৩ ভাই বোনই এখন এমপি প্রার্থী

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার ::
তিন ভাই বোন। একজন বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, অপরজন রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল এবং তাদের একমাত্র বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরী। ৩ জনেরই বড় পরিচয় সাবেক রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের এক সময়ের দাপুটে নেতা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সন্তান।
সারা বছর জুড়ে আলোচনায় থাকার জন্য মাঠে ৩ জনেরই সরব উপস্থিতি থাকে এবং আছে। সাংসদ হওয়ার কারণে এমনিতেই মাঠে থাকেন কমল। গেল ৩টি জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য একই পরিবার থেকে ৩ জনই মাঠে থাকায় দলের অনেকে বিরক্ত।
গতবারের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ৩ জনই প্রকাশ্যে মাঠে কাঁদা ছুড়াছুড়ির বিচারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়ায়। ২০০৮ সালে কমলকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয় কেন্দ্র থেকে।
কিন্তু এখন আবারো পুরনো চেহারায় ৩ ভাইবোন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রামু-সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেতে ৩ জনের উপস্থিতি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। প্রতিবার নির্বাচন আসলেই কেন ৩ ভাইবোন এমন করে এ প্রশ্ন দলের সিনিয়র নেতাদের।
আগামি সংসদ নির্বাচনে ৩ জনই আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা ঘোষনা করে মাঠে প্রচারণা চালানোর কারণে বেকায়দায় দলের অনেকে। তাদের দাবি পারিবারিক সমঝোতার ভিত্তিতে মাঠে নামলে দলের সাংগঠনিক সহযোগিতার পাশাপাশি ভীত মজবুত হবে। তবে দল থেকে মনোনয়ন পাবার আগে মাঠে প্রচারণা চালানো দোষের কিছু নয় বলে মনে করেন অনেক নেতাকর্মী।
সদর-রামু আসনে আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যে কঠিন ‘গৃহদাহ’ তা সকলের কাছে পরিস্কার। তাদের পারিবারিক বিরোধে খোদ রামুর আওয়ামী পরিবার চরম বিরক্ত। অনেকেই তাদের বলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছেন।
আগামি সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরী। তিনি সম্প্রতি নিজের ইচ্ছা জানিয়ে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছেন। তাছাড়া রামু ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লোকজনের খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে দাবী এ মনোনয়ন প্রত্যাশির। আগামি নির্বাচনে দল থেকে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে দৃঢ় আশা কাবেরীর।
কাবেরী জানান, গত ৫ বছরে কক্সবাজারে সুশাসন নিশ্চিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সুযোগ সুবিধা এমপিদের জন্য দিয়েছেন তার অর্ধেক ও কক্সবাজার-রামুতে বাস্তবায়ন হয়নি নানা কারণে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব যাওয়ার কিছুদিন আগে আমার সাথে মনোনয়ন বিষয়ে কথা হয়েছে। আমাকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন মনোনয়নের বিষয়ে। তাছাড়া গতবার ও আমাকে তিনি মনোনয়ন দিতে চেয়েছিলেন। সে সময় কারণ তাঁর কাছে নারী নেতৃত্ব খুবই পছন্দের। কাজল ভাই আমাকে অনুরোধ করায় আমি নির্বাচন থেকে সরে আসি। আশরাফ চাচা (সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম) আমাকে নেত্রীর কাছে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন বলে দাবি কাবেরীর।
তিনিও দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না বলে জানান। তবে পরিবারের সবার উচিত তাকে ছাড় দেওয়া। কেননা তিনি গতবার ও ছাড় দিয়েছেন ভাইদের।
অপরদিকে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজলের প্রত্যাশা এবার নেত্রী তাকে মনোনয়নের জন্য অগ্রাধিকার দেবেন।
কাজল জানান, আমি ৪ বার মনোনয়ন চেয়েছি। গতবার আমার নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এবং মাহবুবুল আলম হানিফ নেত্রীর কাছে আমাকে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। কিন্তু আমি তখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করায় বাতিল করা হয় মনোনয়নপত্র। এবারও আমি মাঠে রয়েছি। রামুতে ৯৯টি ওয়ার্ড কমিটি সক্রিয় করেছি সদরে ও প্রচারণা চালাচ্ছি। কিছু দিন আগেও নেত্রীর সাথে কথা হয়েছে। আশাকরি মনোনয়ন পেতে কষ্ট হবেনা। যদি মনোনয়ন নাও দেন, যাকে দেন তার পক্ষে কাজ করে যাব। আমার কাছে মনোনয়নের চেয়ে দল বড়।
‘পারিবারিক বিরোধ কিংবা পরিবার থেকে আরো অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারে কিন্তু আমি নেত্রীর প্রতিশ্রুতি মনে রেখেছি। আমার রামুতে এবং সদরে বেশিরভাগ নেতাকর্মীর সাথে বছরজুড়ে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আশাকরি এবার মনোনয়ন আমি পাব’। দাবী সোহেল সরওয়ার কাজলের।
বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল দলের সাংগঠনিক কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ করে উন্নয়নের জন্য আগামিবারও মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী।
কমল মনে করেন, দল থেকে তার চেয়ে যোগ্য বিকল্প প্রার্থী নেই। বিশেষ করে যোগ্যতার বিচারে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই তার ৫ বছরের কার্যক্রমের জন্য তাকে মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি মনে করেন।
মনোনয়ন এবং অপর ২ ভাই বোনের মনোনয়ন প্রার্থীতার বিষয়ে মাঠে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কথা বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অসন্তোষের বিষয়ে জানার জন্য সাংসদ কমলের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৩ ভাই বোনের বিরোধ মেটাতে কেন্দ্রে এমনকি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ সেবার সমাধান হয়। শেষ পর্যন্ত কানিজ ফাতেমা মোস্তাককে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে তিনি মনোনয়ন বাছাইকালে বিদ্যুৎ বিল খেলাপি হওয়ার কারণে মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষনার পর সাইমুম সরওয়ার কমল টিকেট পেয়ে যান।
গত বারের মত এবারও ৩ ভাই বোন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে থাকার কারণে গতবারের মত পুণরায় ‘গৃহদাহ’ নতুন করে শুরু হওয়ার আশংকা করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতা। তবে এর উপসংহারে দল নতুন করে কাউকে মনোনয়ন দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

পাঠকের মতামত: