ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবানের বনাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কাপ্তাই ডিএফওর হাতে কাঠপাচার চলছে নির্বিঘ্নে

বান্দরবান প্রতিনিধি ::  বন এবং এলাকা বান্দরবান জেলার হলেও রোয়াংছড়ি উপজেলার বাঘমারা-নাচালং পাড়া অঞ্চলের বনজ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের। এরই সুবাদে বিশাল এই এলাকার বনজ সম্পদ অবাধে লুট হয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের বিভাগীয় অফিস অনেক দূরে হওয়ায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) পদে দায়িত্বরতরা এলাকার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখতে পারেন না।

এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাঘমারা রেঞ্জ ও এই রেঞ্জের অধীনস্থ বিভিন্ন বনবিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে কাঠ পাচারের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবান বন বিভাগ এবং বান্দরবান পাল্পউড বাগান বিভাগের পারমিট ইস্যু প্রায় অচলাবস্থায় পড়ে আছে।

পারমিট ইস্যু প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেছেন বান্দরবান বন বিভাগের ডিএফও কাজী কামাল হোসেন।

এ অবস্থায় বাঘমারা থেকে নিয়ে আসা কাঠ বান্দরবান বন বিভাগ এবং বান্দরবান পাল্পউড বাগান বিভাগ কর্তৃক পূর্বে ইস্যু করা ট্রানজিট পাস (টিপি)-এর অনুবলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি বান্দরবান জেলা সদর সংলগ্ন জামছড়ি-বাঘমারা-নাচালংপাড়া-মসজয়পাড়া মুখ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে সড়কের পাশে এখানে-ওখানে কাঠের স্তূপ পড়ে আছে।

বন বিভাগের কিছু কর্মচারী কাঠ পাচারকারীদের সাথে দেন দরবার করার সময় সাংবাদিক দেখতে পেয়ে সটকে পড়েন। ফলে এ বিষয়ে বাঘমারা রেঞ্জের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘক্ষণ রেঞ্জ অফিসের নিচে সন্ধ্যা নাগাদ দাঁড়িয়ে থাকার পর মনির নামে একজন বন কর্মচারীর দেখা মেলে। তিনি জানান, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) মহলের কয়েকজন উপরে আছেন।’ হাসতে হাসতে ওই বনকর্মী বলেন, ‘তাদের সাথে সব কথা হয়ে গেছে। নতুন করে আর প্যাচাল পাড়বেন না।’

কিন্তু কি বিষয়ে তাঁদের সাথে কথা হয়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি মাগরিবের নামাজ পড়ার কথা বলে দ্রুত সরে পড়েন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এলাকাবাসী জানান, তাদের নিজেদের সৃজিত বাগান হলেও কাপ্তাই বন বিভাগ থেকে পারমিট পেতে বেশি ঝামেলা হয়।

তিনি জানান, পারমিটের জন্যে বান্দরবান-কাপ্তাই-রাঙামাটি এলাকায় বেশ কয়েকবার যেতে হয়।

বারবার যাওয়া-আসায় অনেক খরচ পড়ে যায়। এতে পোষায় না।

এ কারণে তারা মধ্যম স্তরের বেপারিদের কাছে সস্তায় বনের কাঠ বিক্রি করতে বাধ্য হন। এসব মধ্য পুঁজির এসব ব্যবসায়ীর জমানো কাঠগুলোই বড় বড় কাঠ ব্যবসায়ী ক্রয় করে ডিপোতে স্থানান্তর করেন এবং টিপির মাধ্যমে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যান।

বান্দরবান বন বিভাগ এবং পাল্পউড বাগান বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, কর্ণফুলী কাগজ কলে কাঁচামাল হিসেবে নরম কাঠ (পাল্পউড) সরবরাহে সুবিধার জন্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলার আওতাভুক্ত কয়েকটি মৌজা কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের অধীনে দেওয়া হয়।

বর্তমানে পাল্পউডের তেমন একটা চাহিদা না থাকা এবং বনের মূল্যবান কাঠ পাচার বন্ধ করা ও সরকারি বনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার জন্যে বিদ্যমান ব্যবস্থায় কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বান্দরবানের পাল্পউড বাগান বিভাগ বা বান্দরবান বন বিভাগের কাছে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাঘমারা, নাচালংপাড়া, মনজয়পাড়া, আন্তাহাপাড়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে বনজসম্পদ পাচারের একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে।

অধিক মুনাফার জন্যে তারা ‘অপরিপক্ব’ কম বয়সী গাছ কেটে বিক্রির জন্যে নিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন, কাপ্তাই থেকে বান্দরবানের দুর্গম এলাকাসমূহের বন নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ কারণে তারা কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট মৌজাগুলোকে বান্দরবান বন বিভাগ বা বান্দরবান পাল্পউড বাগান বিভাগের কাছে দ্রুত হস্তান্তর করার দাবি জানান।

পাঠকের মতামত: