ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপের ভাঙ্গা সড়কটি পাঁচ বছরও সংস্কার হয়নি 

জসিম মাহমুদ,টেকনাফ প্রতিনিধি ::   টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিম অংশে দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলিন হয়ে গেছে সমুদ্রের করাল গ্রাস ও সামুদ্রিক জ¦লোচ্ছাসের কারণে। এর ফলে বিলীন হয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্তত চার হাজার ঘরবাড়ি। দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একরের চিংড়িঘের ও ফসলি জমি সাগরগর্ভে তলিয়ে গেছে। জোয়ার-ভাটার কবলে পড়ে ‘শাহপরীরদ্বীপ-টেকনাফ’ সড়কের পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়কও ভেঙ্গেগেছে। গত পাঁচ বছর ধরে দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ চরমঝুঁকি নিয়ে নৌকায় টেকনাফ সদরে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।

ভাঙ্গাবেড়িবাঁধের অজুহাত দেখিয়ে গত পাঁচ বছর ভাঙ্গাসড়কটি সংস্কার করা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নৌবাহিনীর তত্বাবধানে শাহপরীরদ্বীপের ভাঙ্গাবেড়িবাঁধে জোড়া লাগিয়ে জোয়ারের পানি ঠেকালেও ভাঙ্গাসড়কটি সংস্কার না করায় যানবাহন নিয়ে টেকনাফ সদরে যাতায়াত করতে পারছেন না দ্বীপের মানুষ। কারণ সড়কটি ভাঙ্গাই পড়ে আছে। এতে দ্বীপের মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

পাউবো সূত্র জানা যায়, ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, ঘোনারপাড়া হয়ে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত ২ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর উচ্চতা হবে সাড়ে ছয় মিটার। প্রস্থ হবে সাড়ে চার মিটার। সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য এক পাশে (সমুদ্রের দিকের অংশে) বসানো হবে পাথরের সিসি ব্লক।

পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, শাহপরীর দ্বীপের প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ১০৬ কোটি টাকার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ৬৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা বন্ধ করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়িভাঁধের ভাঙ্গা অংশটি জোড়া লাগানো হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে।

তিনি আরও বলেন, জোয়ার-ভাটা বন্ধ হওয়ায় শাহপরীরদ্বীপ-টেকনাফ সড়কের সংস্কার কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই। ভাঙ্গা সড়কটি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সওজ বিভাগের।

শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মাষ্টার জাহেদ হোসেন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে শাহ পরীর দ্বীপের মানুষকে নৌকা নিয়ে টেকনাফ সদরে যাতায়াত করেছে। কিন্তু ৮ মাস আগে ভাঙ্গাবেড়িবাঁধটি সংস্কার করায় জোয়ারের পানি আসা বন্ধ, তাই নৌকা চলাচলও কমে গেছে। এতে পুরো ভাঙ্গাসড়ক পায়ে হেঁটে আবার কয়েকটি খাল নৌকায় পেরিয়ে টেকনাফ সদরে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মোটরসাইকেলে চড়ে এই সড়কটি ঘুরে আসেন। সড়কের বেহাল দশা দেখে শাহপরীর দ্বীপের মানুষকে সড়কটি সংস্কার করে দিবেন বলে পদসভায় আস্বাস দিয়ে ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবুও সড়কটির এই পযর্ন্ত কোন উন্নয়ন হচ্ছে না।

গত ৭ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে শাহপরীরদ্বীপের লোকজন ভাঙ্গা সড়কের ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে টেকনাফ আসছেন। শাহপরীরদ্বীপের উত্তরপাড়া থেকে সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়ক ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। সড়কের মধ্যখানে একটি সেতু ও কয়েকটি কালভার্ট ধসে পড়েছে। এসব খাল নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছে লোকজনকে। তবে কাটাবুনিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত আরও ৮ কিলোমিটার সড়ক ঠিক আছে। লোকজন পাঁচ কিলোমিটার ভাঙ্গাসড়ক হেঁটে এসে তারপর অটোরিকশা অথবা ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে টেকনাফ আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে।

শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, ঠেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্বাবধানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ চালাচ্ছে। এতে জোয়ারের পানি বন্ধ হলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ভাঙ্গা সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অসুস্থ্য রোগী নিয়ে টেকনাফ যেতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রসূতি মা ও বৃদ্ধরোগীদের কাঁদে করে টেকনাফের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, শাহপরীরদ্বীপের পাঁচ কিলোমিটার ভাঙ্গা সড়ক সংস্কার, একটি সেতু ও চারটি কালভার্ট তৈরির বিপরীতে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে আছে। আগামী ১৬ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেকের সভায় উত্থাপন করার কথা। একনেকে প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ অনুমোদন পাওয়া গেলে শাহপরীরদ্বীপ ভাঙ্গাসড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে। অন্যতায় শাহপরীরদ্বীপবাসীকে আরও কিছু সময় এভাবে থাকতে হবে।

পাঠকের মতামত: