তোফায়েল আহমদ :
কলাগাছ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। হতেও পারে এটি একটি টেকসই প্রতিবাদ। সৃষ্টি থাকলে তো প্রতিবাদও থাকবে। প্রতিবাদের দরকারও রয়েছে। প্রতিবাদ না থাকলে সমাজে শুদ্ধতার চর্চা থাকবে না। আর শুদ্ধতা নেইতো সভ্যতাও নেই। সভ্যতা ছাড়া সমাজেরও দরকার পড়ে না। আসলে কলাগাছ প্রসঙ্গটি নিয়ে চর্চার ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে গত ১৯ ফেব্রয়ারি ২০১৬ ইং (শুক্রবারের) কলাগাছ প্রতিবাদের ঘটনার পরই। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হবার পরেই কলাগাছ নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে বাদ-প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাটি একদম স্বাভাবিক। একজন দলীয় নেতা-কর্মী মনোনয়ন যেমনি চাইবেন তেমনি না পেলে প্রতিবাদও জানাবেন। হতে পারে তিনি বা তার ক্ষুব্ধ কর্মীরা তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ মিছিল এবং প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ক্ষোভও ঝাঁড়বেন। এমনও হতে পারে ক্ষুব্ধ কর্মীরা শত শত কলাগাছ কেটে সড়ক-মহাসড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর কলাগাছগুলো সড়কের ধারে রোপনও করে দিতে পারেন।
এরকমই ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে গত শুক্রবার দেশের দক্ষিন সীমান্তের টেকনাফ সাবরাং, হ্নীলা, চকরিয়ার চিরিঙ্গা ষ্টেশন এবং মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নেও। সবগুলো ঘটনারই প্রতিবাদের কারন একই। অর্থাৎ আমি বা আমার পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে প্রতিপক্ষকে দেয়া হয়েছে। এ কারনেই কলাগাছ প্রতিবাদ। কিন্তু আমি সাংবাদিক হিসাবে যখন প্রতিবাদকারি এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীর নিকট প্রতিবাদের কারন জানতে চাই-তখন সোজা কথাটা চাপা পড়ে যায়। তখন একথাটা কোনভাবেই মুখ থেকে বের হয়না যে-আমাকে বা আমাদের সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন না দেয়ার কারনেই আমরা প্রতিবাদ করছি। বরং বলা হয়-আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি ইয়াবা ও মানবপাচারকারী, জঙ্গী এবং যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তানকে মনোনয়ন দেয়ার বিরুদ্ধে।
কলাগাছ তত্বটি নিয়েও একবার পেছনে যাওয়া ভাল মনে করছি। সময় ছিল তখন ২০০১ সাল। সেই ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মোঃ খালেকুজ্জামান আকস্মিক মৃত্যুবরণ করার পর উপনির্বাচনের প্রার্থী নিয়েও টানাটানি হয়। পরিস্থিতিটা ছিল এক প্রকার ভিন্নরকমের। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বিএনপি তখন প্রার্থী করে তদানীন্তন জেলা যুবদলের সভাপতি লুৎফুর রহমান কাজলকে (সাবেক দলীয় এমপি)। অপরদিকে জনপ্রিয় নেতা খালেকুজ্জামানের মাঠ পর্যায়ের সমর্থকরা চান তাঁর কনিষ্ট ভাই ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সহিদুজ্জামানকে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কক্সবাজার সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আকতার চৌধুরী জানান, মরহুম খালেকুজ্জামানের মনোনয়ন বঞ্চিত সমর্থকরা তখন প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ঈদগাঁও এলাকার এক বিশাল প্রতিবাদ সভায় এক তরুন একটি কলাগাছ হাতে তুলে নাকি ক্ষোভে বলতে থাকেন-ধানের শীষে ভোট দেব না। ভোট যদি দিতেই হয় তাহলে এই কলাগাছেই দেব। হুজুগি বাঙ্গালী বলে কথা। সেই ক্ষুব্ধ তরুনের কলাগাছের সাথে মুহূর্তেই যোগ হয় শত শত কলাগাছ। সেই কলাগাছ নিয়েই মিছিল। আর সেই কলাগাছই মহাসড়কের দুইধারে মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়। ব্যশ কলাগাছ জাতে উঠে গেছে। পরের দিনই বিএনপি’র মনোনয়ন পরিবর্তন করা হয়। সেই কলাগাছ তত্বের মূলত সৃষ্টি দলের বিরুদ্ধে দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে সরকার।
সেই ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরা যেমনি কলাগাছ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন আজ মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই মনোনয়ন বঞ্চিতরা। সুতরাং মুদ্রারই এপিঠ আর ওপিঠ। এবার বলি কলাগাছের আন্দোলনের সূফল নিয়ে। দেখুন কলাগাছ এমন নয় যে কেটে ফেললে সমুলে ধ্বংশ হয়ে যাবে। বরং কলাগাছ যতই কাটবেন ততই নতুন করে আরো শক্তিশালী নতুন চারা গজিয়ে উঠবে। সেই চারাও কাটলে আরো চারা গজাবে। এভাবে গজাতেই থাকবে কেবল। কলা গাছে সার দিতে হয়না,পানি দিতে হয়না। এমনকি কলাগাছের জন্য এমন বেশী করে যতœ নেয়া আর না নেয়া বলতে গেলে একইকথা। তবে যতœ নিলে ভালতো বটেই।
কলাগাছ কেটে এ পর্যন্ত কেউ পরিবেশ আইনের মামলার আসামী হয়েছে এরকমও শুনা যায়নি। তাই পরিবেশ বাদীদের অত্যাচার-নির্যাতন এবং মামলা-মোকদ্দমার কথা বলে হুমকি-ধমকি দেয়ারও ঝুঁকি থেকে রক্ষা মিলবে। কলাগাছের এত বাদ- প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়েছে বলেও জানা যায়নি। কলাগাছের আন্দোলন করে কেউ গ্রেফতার বা মামলা-মোকদ্দমায়ও পড়েনি। কলাগাছের আন্দোলনে নাশকতারও ভয় থাকেনা। তাই নাশকতার ধারায় গ্রেফতার আতংক থেকেও রেহাই মিলবে। সর্বোপরি কলাগাছে বারুদ বা পেট্রল দিলেও তা সহজেই নিভে যাবে। একারনে বিষ্ফোরণের আশংকাও থাকবে না। কলাগাছের আন্দোলন হবে এদেশের জন্য সবচেয়ে টেকসই। এমনকি কলাগাছের আন্দোলনই হতে পারে একদম নির্ভেজাল পরিবেশ বান্ধব আন্দোলন। প্রতিবাদ আর আন্দোলনে আর নয় পেট্রল বোমা, গুলি এবং যান বাহন ভাংচুর সহ অগ্নি সংযোগ। তাই সরকারি দল, বিরোধী দল, মনোনয়ন বঞ্চিতরা, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর হারের দল, যত রকমের জঙ্গীর দল সহ সকল মতাদর্শের পরষ্পর বিরোধীরা সবাই এক কথায় আসুন-এখন থেকে আন্দোলন আর প্রতিবাদ হবে কলাগাছ নিয়ে। ####
তোফায়েল আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক কালের কন্ঠের কক্সবাজারে কর্মরত জেষ্ট প্রতিবেদক। ঃড়ভধুবষপড়ী@ুধযড়ড়.পড়স
প্রকাশ:
২০১৬-০২-২৮ ০৮:১০:৩১
আপডেট:২০১৬-০২-২৮ ০৮:১১:০৩
- সেলিম-শফির খুনীদের এলাকায় ডুকতে দেয়া হবে না
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
- সরকার বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান সুযোগসহ নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন
- চকরিয়ায় মানিকপুরে চৌকিদারসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর নতুন ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ
- বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ
- চকরিয়ায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি, ৪ হাজার ৮শত পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
- চকরিয়া শাউউবি-২০০০ ব্যাচের বন্ধু ও পারিবারিক মিলিয়ন মেলা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় জমি বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ ৬ জন আহত
- অবৈধ গাছ পাচারে মাসিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় রেঞ্জ কর্মকর্তার
- কক্সবাজারে বিদ্যুৎ সংকট না থাকার আভাস : মিলছে চাহিদার পুরো ২০০ মেগাওয়াটই
- কক্সবাজারে বিদ্যুৎ সংকট না থাকার আভাস : মিলছে চাহিদার পুরো ২০০ মেগাওয়াটই
- চকরিয়ায় জমি বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ ৬ জন আহত
- চকরিয়ায় মানিকপুরে চৌকিদারসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- রুমা-থানচির ব্যাংক ডাকাতি: ১৮ নারীসহ ৫৬ জন কেএনএফ সদস্য গ্রেফতার, অস্ত্রসহ মাস্টারমাইন্ড ও সরঞ্জাম উদ্ধার
- অবৈধ গাছ পাচারে মাসিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় রেঞ্জ কর্মকর্তার
- চকরিয়া শাউউবি-২০০০ ব্যাচের বন্ধু ও পারিবারিক মিলিয়ন মেলা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি, ৪ হাজার ৮শত পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
- বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর নতুন ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ
- সরকার বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান সুযোগসহ নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
পাঠকের মতামত: