ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘পাইন্যাগুলা’ নামের ছোট ফলটি নিয়ে যায় দুরন্ত শৈশবে

জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া ::

‘পাইন্যাগুলা’ নামে ছোট আকারের লাল খয়েরি রঙের গোল ফলটি অনেককেই ছোটবেলার সেই দুরন্ত শৈশবের স্মৃতিতে নিয়ে যেতে পারে অনায়াসেই। অঞ্চলভেদে এটির নাম টিপফল, টিপটিপানি, পেলাগোটা,প্যালা, পায়লা, টরফই, পানি আমলা, পাইন্যাগুলাসহ আরো অনেক নাম রয়েছে। পাকার পর লাল–খয়েরি রঙের মিষ্টি ও সুস্বাদু এ ফল ছোটদের বিশেষ পছন্দ। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা মিললেও চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে রয়েছে এর প্রাচুর্য। বিশেষ করে লামা-আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ও একসময় দেখা যেত এই ফলটি। এখন আবার অনেকে চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ায় আবার হাটে বাজের দেখা যাচ্ছে এই ফলটি। মূলত বর্ষার এই সময়েই দেখা যায় এই ফলটি। কৃষি বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে এখানে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ ফলটির বাণিজ্যিক চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ ফলে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন রয়েছে। এছাড়া সালফার ফসফেট ছাড়াও রয়েছে ১০ ভাগ ভিটামিন সি। রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ে। হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ওষুধের কাজ করে। তাছাড়া এর পাতায় রয়েছে ডায়রিয়া প্রতিরোধক্ষমতা। শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। আর দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে এ গাছের শিকড়।এ সুস্বাধু ফলটি চকরিয়া পেৌরসদরের বিভিন্ন জায়গা বিক্রি করতে দেখা যায়। নিশ্চয় বিক্রেতারা লামা-আলীকদমের পাহাড়ী এলাকা থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে চকরিয়ায়।

প্রথমে সবুজ থাকলেও ফলটি পাকার সঙ্গে সঙ্গে লাল–খয়েরি রঙ ধারণ করতে শুরু করে। ভেতরে পাঁচ–ছয়টি ছোট ছোট বীজ থাকে। একসময় পার্বত্যাঞ্চল, লামা-আলীকদসের পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর দেখা মিললেও সংরক্ষণের অভাবে ফলটি হারিয়ে যাচ্ছে। তবে লামা-আলীকদসের পাহাড়ি এলাকা, আবহাওয়া ও মাটি এ ফলের গাছের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এখনো এর প্রাচুর্য রয়েছে। এখনো চাইলে লামা-আলীকদসের উপজেলার ন্যাড়া ও পতিত পাহাড়ি এলাকায় এর ব্যাপক রোপণ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মে থেকে জুন মাসের দিকে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। জুলাই থেকে আগস্ট এর দিকে ফল পাকা শুরু হয়। তখন এখন বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হয় এ ফল।

পাইকাররা গাছের মালিকদের কাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন। তবে কিছু কিছু মালিক নিজেরাই হাটে এগুলো বিক্রি করেন। বর্তমানে এ ফল বাজারে প্রতি কেজি ১০০–১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চকরিয়াউপজেলার চিরিংগা বাসষ্টেশনসহ চকরিয়া পৌরসভা কাচাবাজার রোড়, ওয়াপদা রোড়, বাসটার্মিনাল, হাসপাতাল সড়ক, চিরিংগা পুরাতন বাসষ্টেশনসহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা যাচ্ছে এখন ফলটি।

চকরিয়া কাচা বাজারের এক বিক্রেতা আবদুল করিম জানান, আট বছর আগে তার ফলদ বাগানের এক কোণে একটি পাইন্যাগুলা গাছ জন্মে। গত মৌসুমে এ গাছে প্রায় ১ মণ ফল ধরে, সে ফল তিনি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তিনি আরো জানান, আম, জাম ও কাঁঠালের মতো এ ফলের গাছও দীর্ঘজীবী হয়। বীজ থেকে চারা জন্মে। কলমের মাধ্যমেও এর চারা উৎপাদন করা যায়।প্রতিকেজি ফল বিক্রি হচ্ছে ১০০টাকা থেকে ১২০টাকা পর্যন্ত।

চকরিয়া উপজেলার এক সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘লুকলুকি অর্থাৎ পাইন্ন্যাগুলা একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল। এর ঔষধি গুণ রয়েছে। এখানকার পাহাড়ি আবহাওয়া ও মাটি লুকলুকি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে এখানকার পতিত পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে এ ফল চাষ করা সম্ভব, যা ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।’

পাঠকের মতামত: