ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবি একাংশের

‘ফেসবুকের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা হাস্যকর’  ।। কমিটির ৭ নেতার পদত্যাগ

অনলাইন ডেস্ক ::

ফেসবুকের মাধ্যমে কলেজ কমিটি ঘোষণা হাস্যকর দাবি করে অনতিবিলম্বে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন এবং সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি করেছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, জামায়াত–শিবির ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীলনকশা হিসেবে রাতের আঁধারে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ কমিটি দিয়েছেন। এছাড়া নবগঠিত কমিটির সভাপতি মাহমুদুল করিমের বিরুদ্ধে ইভটিজিং ও নারী লাঞ্ছনা এবং সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিকের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে। কমিটির আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩৪ বছর পর সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এসব দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলন করা ছাত্রলীগের এই অংশের নেতাকর্মীরা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মহানগর ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি এম কায়সার উদ্দিন বলেন, ঠিক যে মুহূর্তে সবক্ষেত্রে ঐক্যের সুর,সবাই যখন কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে জামায়াত–শিবির ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীলনকশার অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাতের আঁধারে এ কমিটি ঘোষণা দেন।

কায়সার উদ্দিন বলেন, যদি নির্বাচনকালীন কোনো কমিটির প্রয়োজন হতো তাহলে তা দরকার ছিল সিটি কলেজ, এম ই এস কলেজ ও ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ ও ছাত্রলীগের কমিটি বহু বছর আগে হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ ও ছাত্রলীগের কমিটির ভিপি, জিএস, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ছাত্রত্ব চলে গেছে অনেক বছর আগে। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিকে বিতর্কিত ও পকেট কমিটি দাবি করে কায়সার উদ্দিন বলেন, জামায়াত শিবির ও ছাত্রদল ঘেঁষা চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে করা এ কমিটি আমরা কোনোভাবে মেনে নেব না। বিতর্কিত, ভুয়া ও পকেট কমিটির ইতোমধ্যে সাতজন পদত্যাগ করেছেন।

নতুন কমিটির স্থান পাওয়া অনেকেরই বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,

নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ইভটিজিং, নারী লাঞ্ছনা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগে ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তিনি চিহ্নিত ভূমিদস্যু। বছরখানেক আগে ভূমি দখল করতে গিয়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। যা ওই সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগের এ নেতা।

এছাড়া নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া ইউসুফ, খাদেমুল ইসলাম, আবু নাঈম হাসান, রিফাতসহ আরও অনেকেরই বিরুদ্ধে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

কায়সার উদ্দিন বলেন, যে ত্যাগের বিনিময়ে শিবির অধ্যুষিত এই চট্টগ্রাম কলেজকে শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবিরমুক্ত করেছে সেই প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব মেনে নেয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। শিগগির এই কমিটি বাতিল করা না হলে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।

এর আগে গত সোমবার রাতে সাবেক মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির অনুসারী হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও চকবাজার থানা যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত সুভাষ মল্লিককে সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেয় নগর ছাত্রলীগ।

২৫ সদস্যের আংশিক কমিটির এ অনুমোদন দেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি রেজাউল আলম রনি, মহিউদ্দিন মাহি, মোহাম্মদ শাকিল, মিথুন মল্লিক উপস্থিত ছিলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বলে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, ইয়াসির আরাফাত, আরিফ মইনুদ্দিন, সুজয়মান বড়ুয়া জিতু, আবু সায়েম, মহানগর ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি রেজাউল আলম রনি, মিথুন মল্লিক, মো. শাকিল, মহিউদ্দিন মাহি, যুগ্ম–সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মঈন শাহরিয়ার ও সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা মোস্তাফা কামাল প্রমুখ। সদ্য ঘোষণাকৃত কমিটি বাতিল না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এদিকে কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনায় চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।

পাঠকের মতামত: