ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মিছিলে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া

কমিটি নিয়ে আবার উত্তপ্ত চট্টগ্রাম কলেজ, ককটেল বিস্ফোরণ

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

ছাত্রলীগের ঘোষিত কলেজ কমিটির জেরে গতকালও উত্তপ্ত ছিলো চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ কর্মীরা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে এবং সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালায়। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হয়। এক পর্যায়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করবে না এই শর্তে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের মিছিল করার অনুমতি দিলে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস থেকে গণি বেকারি ঘুরে গুলজার মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। মিছিলের এক পর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণ, রাম দা কিরিচ নিয়ে মহড়া, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণি বেকারি এলাকায় বিপুল সংখ্যক মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জড়ো হয়। এক পর্যায়ে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগকর্মীদের সাথে যোগ দেয় তারা। মিছিলে অনেকেরই মুখে রুমাল ও মাস্ক পড়া অবস্থায় ছিলো। আবার কয়েকজন বিক্ষোভকারী রাম দা, কিরিচ ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প নিয়ে মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি গণি বেকারি থেকে গুলজার মোড় হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ গেটের সামনে আসার পর পরই পার্শ্ববর্তী মহসিন কলেজের ভিতরে দুই তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মহসিন কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এর কিছুক্ষণ পর মিছিলে অংশ নেয়া কয়েকজন যুবক আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এদিকে এসব ঘটনায় চট্টগ্রাম কলেজের আশপাশে যান চলাচল একেবারে থেমে যায়। ফলে প্রচণ্ড রোদ সহ্য করে শত শত মানুষকে হেঁটে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

মহসিন কলেজের বিএসসি সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিদরাতুন মুনতাহা গতকাল দুপুরে বলেন, আর মাত্র ১৫ মিনিট পরেই আমদের পরীক্ষা শুরু হবে। গণ্ডগোলের কারণে আমি কলেজে প্রবেশ করতে পারছি না। একই কথা বলেন– ইমরান হোসেন নামে অপর শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, গত দুইদিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে খুব উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে

এক কলেজের প্রভাব পড়ে অন্য কলেজে। আজকে বিক্ষোভকারীরা এখানে মহসিন কলেজে প্রবেশ করে পটকা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এই মূহুর্তে আমরা আতঙ্কে আছি।

ঘোষিত কমিটিতে সহ–সভাপতির পদ পাওয়া মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমরা আজ (গতকাল) সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হই। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত আমরা কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিই। পরবর্তীতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং পুলিশ কমিশনারের অনুরোধে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করি। পুলিশের অনুমতি নিয়ে দুপুর ১২ টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল নিয়ে গণি বেকারি থেকে গুলজার মোড় প্রদক্ষিণ শেষে আবার কলেজে ফিরে আসি। তবে আমাদের মিছিলে কিছু বহিরাগত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে। এসময় চকবাজার এলাকার স্থানীয় একটি গ্রুপ অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তারা আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে পটকা বিস্ফোরণ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়েছে। আমাদের বেধে দেয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ। তাই পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আমরা (আজ) দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করছি।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা না পাওয়া নেতাকর্মীরা সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে আমরা তাদের বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিই। এক পর্যায়ে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা করবে না এই শর্তে তাদের মিছিল করার অনুমতি দিই। মিছিলে পুলিশ সদস্যরাও ছিলো। মিছিল নিয়ে চকবাজার এলাকার গুলজার মোড় থেকে গণি বেকারি পর্যন্ত তারা প্রদক্ষিণ করে। তবে এক পর্যায়ে কয়েকজন বিক্ষোভকারী মহসিন কলেজের ভিতরে দুই তিনটি পটকার বিস্ফোরণ ঘটায়। এক সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এখন থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের আর দাঁড়াতে দেয়া হবে না। এছাড়া আইডি কার্ড ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে কলেজে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম কলেজে ঘোষিত ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে গত মঙ্গলবার কলেজের সামনের সড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে মেয়র অনুসারী পদবঞ্চিত ছাত্রলীগকর্মীরা। এক পর্যায়ে মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র অনুসারী ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। ছাত্র শিবিরের সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হওয়া ছাত্রলীগের প্রায় তিন দশক ধরে ওই কলেজে কোন কর্মকাণ্ডই ছিল না। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস দখলে নেয়। এরপর থেকে কলেজ দুটিতে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলে আসছে। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছর পর গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। কমিটিতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মাহমুদুল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দৈনিক আজাদী

পাঠকের মতামত: