ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লামায় আশ্রয়ণ প্রকল্পকে পুঁজি করে কৃষকের জায়গা দখলের অভিযোগ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::  বান্দরবানের লামায় আশ্রয়ণ প্রকল্পকে পুঁজি করে কৃষকের বন্ধোবস্তীকৃত ৪০ বছরের ভোগদখলীয় জায়গা দখলের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন ভূমিদস্যু প্রকৃতির মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসকৃত সহজ-সরল নিরীহ মানুষকে ব্যবহার করে এই অপকর্ম করছে বলে জানিয়েছেন, ২৯৫নং লামা মৌজার জি/২০ হোল্ডিংয়ের জায়গার মালিক আবুল কাসেম। তিনি আরো বলেন, এই বিরোধীয় ভূমির বিষয়ে বান্দরবান যুগ্ম জেলা জজ আদালতে অপর মামলা ২৪(ডি)/২০১০ করে আমি রায় পেয়েছি।

আবুল কাসেম বলেন, আমি ২৯৫নং লামা মৌজার জেনারেল হোল্ডিং ২০/ক মূলে ৩ একর তৃতীয় শ্রেণীর জায়গার মালিক। আমার জায়গার পার্শ্ববর্তী খাস জায়গায় ২০০১ সালে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মিত হয়। সরকারি ভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। কাগজে কলমে একটি চৌহদ্দী দেয়া হলেও সেই চৌহদ্দীর অধিকাংশ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দখলে প্রায় ২ একর জায়গা রয়েছে। জনৈক রশিদ প্রায় ৬ একর, অরবিন্দ মাষ্টার প্রায় ২ একর, আব্দুস ছোবাহান প্রায় ৩ একর ও ক্যাং প্রায় ২ একর জায়গা দখল করে নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই সুযোগে স্থানীয় মো. হারুণ, মো. ওসমান, মো. সুলতান সহ প্রকল্পের বাসিন্দা সেকান্দর, জিয়াবুল, মোহাম্মদ হোচন, ইউছুপ মিলে আমার বন্দোবস্তীকৃত ৩ একর জায়গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বলে দাবী করছে। বিগত সময়ে স্থানীয় ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫জন মিলে আমার জায়গার গাছ কেটে ফেললে আমি লামা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। তারা মুচলেখা দিয়ে রেহাই পায়। কাগজে কলমে না পেরে স্থানীয় ২/৩ জনের কু-পরামর্শে তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেয়। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি সরকার হতে বন্ধোবস্তি পেয়ে কাগজ মতে পাহাড় আবাদ করে ভোগদখলে আছি। আমি কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেনি। আমার জায়গা রক্ষার্থে ও সুবিচার পেতে আইনের কাছে আশ্রয় নিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ বাস্তবায়ন সংস্থা (আবাস) এর গত ২ এপ্রিল ২০০১ইং তারিখের স্মারক ১১.৩৯.১৬.০০.৩২৯.২০০০-৪৮৬ মূলে লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নে ১৫ একর জায়গার উপর মেরাখোলা আশ্রয়ণ প্রকল্প করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সেই মূলে সেখানে ১৩টি ব্যারাক নির্মিত হয়। সরকারি রেকর্ড মতে সেখানে বর্তমানে ১৩০টি পরিবার বসবাস করছে। সরকারি ভাবে উত্তরে পাহাড়, দক্ষিণে পাহাড়, পূর্বে সমতল (আঃ রশিদ) ও পশ্চিমে সমতল (অরবিন্দ মাষ্টার) এই চৌহদ্দীতে ১৫ একর জায়গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে করা হলেও কোন ধরনের রেকর্ডপত্র করা হয়নি।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ জায়গা পার্শ্ববতী কয়েকজন দখল করে নিয়েছে। আবুল কাসেমের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পূর্ব-উত্তর সীমানায় জি/২০-ক হোল্ডিং মূলে ৩ একর জায়গা মালিক হলেও তার দখলে ১ একর জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে একটি পক্ষ জায়গা দখলের মানসে বিরোধীয় ভূমিতে একটি নতুন কবরস্থান সৃজন করেছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসরত কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, অধিকাংশ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। সম্প্রতি সময়ে আমাদের নিয়ে একটি গ্রুপ ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের দিয়ে অভিযোগ দেয় আবার তারা নিজেরা ভুয়া কাগজ তৈরি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা দখল করছে।

লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, ২৫ একর জায়গা চিহ্নিত করে ১৯৯৬ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য মেরাখোলাস্থ স্থান নির্বাচন করা হয়। তখন এই জায়গার পরিত্যক্ত ও মূল্য কম থাকায় কেউ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিরোধীতা করেনি। পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে কাগজে পত্রে ১৫ একর জায়গা লেখা হলেও সরকারি বালামে কোন জায়গা তৌজিভুক্ত হয়নি। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষ নিজেদের নামের কাগজ প্রদর্শন করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা নিজের বলে দাবী করে দখল করে নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি দ্রুত আমলে নিয়ে জায়গার সমস্যা সমাধান না করলে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি একসময় হারিয়ে যাবে। প্রকল্পে আশ্রয় গ্রহণকারীরা দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে এবং ভূমি সমস্যা সমাধান না হওয়ায় সরকারি অনেক সুবিধা হতে বঞ্চিত।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা সরকারিভাবে রেকর্ডভুক্ত না হওয়ায় কিছু মানুষ সুযোগ নিতে চাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমি বিরোধ দ্রুত সমাধান করা হবে। এই বিষয়ে সৃষ্ট অভিযোগ গুলো আমরা খতিয়ে দেখব।

পাঠকের মতামত: