ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লোকবল সংকটে ধুকঁছে পিডিবি

বিশেষ প্রতিবেদক :
তীব্র লোকবল সংকটে ধুকছে কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ( পিডিবি)। চাহিদার তুলনায় প্রায় সোয়া তিনগুন কম লোক দিয়েই চলে জেলার ৪ টি উপজেলায় সংস্থাটির কার্যক্রম। ৭৮ হাজার গ্রাহকের সেবার জন্য ২৬৬ জনের মঞ্জুরীকৃত পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ১৮৫ টি পদে লোক নেই। একারণে ৮১ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে ধুকেঁ ধুঁেক চলছে এর কাজ।ফলে মাসিক বিল তৈরি ও মিটার চেকিং, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ সহ সংস্থাটির নিয়মিত নানা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। তবে এর মাঝেও পিডিবি সিস্টেম লস কমিয়ে জেলায় লোডশেডিং কমিয়ে এনেছে।
পিডিবি সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহর, রামু, চকরয়িা ও কুতুবদিয়ার ৭৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে শহরের ৩৯ হাজার গ্রাহকের জন্য ১৩৭ জনের মঞ্জুরীকৃতপদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ৪৩ জন।  আর দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ৯২ জনের পদ। জেলার নির্বাহি প্রকৌশলী থাকলেও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর পদটি শূন্য রয়েছে।  সহকারী প্রকৌশলী ৪ জন থাকলেও উপ সহকারী প্রকৌশলী ৭ জনের পদের বিপরীতে ৫ জন রয়েছে। উচ্চমান সহকারী থাকলেও নিম্মমান সহকারীর ৩ টি পদই শূন্য। নেই ষ্টোনো টাইপিষ্ট। ষ্টোর কিপার ২ টি পদের স্থলে কর্মরত রয়েছে ১ জন।  সহকারী হিসাব রক্ষক পদে ২ জন থাকলেও ১১ জন লাইনম্যানের মঞ্জুরীকৃত পদের স্থলে ৯ জন কর্মরত।  ২৭ জন সাহায্যকারী থাকার কথা থাকলেও ১৭ টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শুন্য। ফোরম্যান বি, ইলেকট্রিশিয়ান-এ ও সি, ক্যাবল জয়েন্টার বি এর ৭ টি পদেই লোক নেই।  ৪ জন ড্রাইভারের বিপরীতে ১ জন কর্মরত রয়েছে। ১২ জন গার্ড থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৪ জন। ৩ জন এমএলএসের স্থলে ১ জন রয়েছে। সুইপার ও অভিযোগ গ্রহনকারীর ৩ টি পদই শূন্য। সহকারী পরিচালক বানিজ্যিক ও সহকারী বানিজ্যিক কর্মকর্তা পদ দুটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। মিটার রিডার ও উচ্চমান সহকারী নেই। ৭ জন নি¤œমান সহকারীর স্থলে ১ জন কর্মরত রয়েছে। এসবিএ ডি ও সুপার ভাইজার (ডাটা) পদে লোক থাকলেও কুক বি, বেয়ারার, মিটার পরিদর্শক, এসএবি এবং এসবিএ সি এর ৯ টি পদই শূন্য। কলাতলী উপকেন্দ্রে ৮ জনের স্থলে ১ জন কর্মরত থাকলেও ঝিলংজা এবং মটেল রোডস্থ  সুইচিং ষ্টেশন ও অভিযোগ কেন্দ্রের ১৪ টি পদ শূন্য রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার ১৬ হাজার গ্রাহকের জন্য সাড়ে ৯ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আর এই উপজেলায় তিনটি কেন্দ্রে ৭২ জন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও মাত্র ২৫ জন কর্মরত রয়েছে। বাকি  পদগুলো শূন্য রয়েছে।
এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক প্রকৌশলীর পদটি শুণ্য থাকার পাশপাশি
উপ সহকারী প্রকৌশলী ৩ জনের বিপরীতে ২ জন কর্মরত রয়েছে। উচ্চমান সহকারী ও  নিম্মমান সহকারীর ৩ টি পদই শূন্য। উচ্চমান হিসাব সহকারী থাকলেও নেই ষ্টোর কিপার। লাইনম্যান ৬ জনের জায়গায় কাজ করছে ৩ জন। অভিযোগ গ্রহনকারী, ফোরম্যান, ইলেকট্রিশিয়ান বি ও  ড্রাইভারের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ১৩ জন সাহায্যকারীর স্থলে ৬ জন এবং ১২ জন এমএলএসের বিপরীতে ৬ জন কর্মরত থাকলেও মিটার রিডারের ৪ টি পদই শূন্য। তবে মিটার পরিদর্শক হিসেবে ১ জন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও নি¤œমান সহকারীর ৪ জনের স্থলে ১ জন কাজ করছে।  এসবিএ বি, এসবিএ সি ও এসবিএ ডি এর ৪ টি পদই লোক নেই। ২ জনকে ইলেকট্রিশিয়ান অতিরিক্ত থাকলেও গার্ড ৪ জনের বদলে কাজ করছে ২ জন।  কোচপাড়া উপকেন্দ্রে জনের বিপরীতে ২ জন কাজ করলেও আজিজ নগর উপকেন্দ্রের ৮ টি পদই শূন্য।
রামুর ১২ হাজার গ্রাহকের জন্য চাহিদাকৃত ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৩০টি মঞ্জুরীকৃতের পদের বিপরীতে রামুতে পিডিবি’র ১০ জন লোক কাজ করছে। ওই উপজেলায় আবাসিক প্রকৌশলী, উপ সহকারী প্রকৌশলী, উচ্চমান সহকারী ও নি¤œমান সহকারী থাকলেও ক্যাশিয়ার ও ষ্টোর কিপার পদ ২ টি দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। ৪ জনের লাইনম্যানের স্থলে ১ জন কাজ করার পাশাপাশি অভিযোগগ্রহনকারী, ইলেকট্রিশিয়ান এবং ড্রাইভারের পদগুলো শূণ্য। ৪ জন গার্ডের বিপরীতে ১ জন ও ৯ জন সাহায্যেকারীর স্থলে ৪ জন কাজ করলেও নি¤œমান হিসাব সহকারী ও মিটার রিডারের ৪ টি পদই দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে।  কুতুবদিয়ার ১ হাজার গ্রাহকের জন্য ২৭ জনের কাজ করার থাকলেও কাজ করছে মাত্র ৩ জন । বাকি পদগুলো শুন্য।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লোকবল সংকট কারনে কিছু সমস্যা হয় এটি সত্যি। আর এই সমস্যা কমাতে শহরে মিটার রিডার পদে  ২৩ জন , রামুতে ৭ জন , চকরিয়াতে ১২ জন এবং কুতুবদিয়া ২ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এক তৃতীয়াংশ কম লোকবলে দিয়েই পিডিবি কার্যক্রম চললেও অতীতের তুলনায় বর্তমানে সিস্টেম লস অনেক কমেছে। শতকরা ১৪ থেকে কমিয়ে ৮.২৫ এ সিষ্টেম লস নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে লোডশোডিংও কমেছে। একসময় গ্রাহকরা বিল না দিলেও এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে নিয়মিত বিল দিচ্ছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ অভিযান অব্যাহত থাকায় ও জরিমানা আদায় করার কারণে জনগনও অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়েছে।

পাঠকের মতামত: