ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্রগ্রাম-১৩, আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসন পুনরুদ্ধারে দলীয় কোন্দল বিএনপির বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম ::       চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী) সংসদীয় আসনটি পুনরুদ্ধারে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।    আন্দোলনের পাশাপাশিনির্বাচনের জন্য তৈরি হচ্ছে দলের নেতাকর্মীরা।তবে কোন্দলের কারণে আসনটি পুনরুদ্ধার নিয়ে সংশয় প্রকাশকরেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির এক নেতা জানান, আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপির দুইটি কমিটিরয়েছে।এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ মুহূর্তে কোন্দল নিরসন করা না হলে আগামীনির্বাচনে দলের প্রার্থীকে ভুগতে হবে।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম ১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী)  সংসদীয় আসনে বিএনপি থেকে বেশকয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন, গততিনবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপিরসিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. আলী আব্বাস ও বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। মনোনয়নের জন্য তাঁরা কেন্দ্রেদৌঁড়ঝাপ করছেন বলে তাদের অনুসারীরা জানিয়েছেন। সরওয়ার জামাল নিজাম এ আসনে ১৯৯৬ সালের ১৫ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। একই বছর ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন তিনি।এরপর ২০০১ সালে পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম।২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করলেও পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীআখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র কাছে। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। আসন্নএকাদশ নির্বাচনে সরওয়ার জামাল নিজাম আবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে তাঁর ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানেতিনি ব্যক্তিগত কাজে লন্ডন সফরে রয়েছেন। তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা উপজেলা বিএনপিরএকাংশের সভাপতি শাহ জাহান চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজামব্যক্তিগত কাজে লন্ডন সফরে রয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি এবারও বিএনপি থেকেমনোনয়ন চাইবেন তা অনেকটা নিশ্চিত।’
দলের আন্দোলন–সংগ্রামে সরওয়ার জামাল নিজাম মাঠে না থাকার উপজেলা বিএনপির একাংশের অভিযোগ প্রসঙ্গেশাহ জাহান চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অপপ্রচার। তিনি দলের কর্মসূচিতে মাঠে থেকেছেন। এবারওতিনি মনোনয়ন পেলে বিএনপি এ আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতবেন।’
এ আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আলী আব্বাস। তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদকছাড়াও কর্ণফুলী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপিও শ্রমিক দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির শুরুতে তিনি চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন।
তাঁর অনুসারীরা জানান, দলের আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে থেকেছেন মো. আলী আব্বাস। দলের দুঃসময়েনেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। দল এবার তাঁকে মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. আলী আব্বাস বলেন, ‘আমি দলের আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে ছিলামএবং আছি। বিএনপির কর্মসূচি থেকে শুরু করে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থাকার থাকতে চেষ্টা করি। সুতরাংএসব বিবেচনায় দল আমাকে এবার মনোনয়ন দিবে সেই প্রত্যাশা করছি।’
এ আসনে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সৌদি আরবে শ্রমিকদলের সভাপতি ছিলেন। বছর খানেক আগে দেশে এসে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাথে জড়িত হয়েছেন।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আনোয়ারা আসনে আমি এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের কাছেমনোনয়ন চাইবো। দলে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী) সংসদীয় আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী ১০টি নির্বাচনের মধ্যে চারবারবিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় সর্বোচ্চ পাঁচবার। মাত্র একবার ১৯৮৮ সালে বিজয়ী হনজাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব এর নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধীদলের প্রার্থী মোখতার আহমেদ। বিএনপি এআসনে যে চারবার বিজয়ী হয় তার তিনবারই প্রার্থী ছিলেন সরওয়ার জামাল নিজাম। একবার জিতেছেন বিএনপির শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
পরিসংখ্যান মতে, ১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদইদ্রিছ বিকম। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।১৯৮৬ সালে ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। এইনির্বাচনের তিন বছরের মধ্যে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন জাসদেরআ স ম আবদুর রব এর নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধীদলের মোখতার আহমেদ। একই আসনে ১৯৯১ সালে ২৭ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। ১৯৯৬ সালের ১৫ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম। একই বছর ১২ জুন সপ্তম সংসদনির্বাচনেও জয়লাভ করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হনবিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন আওয়ামী লীগেরআখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। ২০১২ সালে তিনি ইন্তেকাল করলে শূন্য আসনে উপ–নির্বাচন করা হয়। ২০১৩সালের ১৭ জানুয়ারি উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র জেষ্ঠ্য সন্তান আওয়ামী লীগনেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন।
সবশের্ষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

পাঠকের মতামত: