ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

এবার চট্টগ্রামে বাস থেকে ফেলে পিষে যাত্রী হত্যা

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::  নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত মাসে সড়কে নেমে লাগাতার বিক্ষোভ করে সারা দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যখন মন্ত্রী-সচিবদের নিয়ে ‘সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের’ বৈঠক হচ্ছিল ঠিক তখন চট্টগ্রামে ঘটে যায় আরেকটি বর্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এবার ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার জের ধরে এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে পিষে হত্যা করেছে একটি বাসের চালক ও সহকারী।

গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেটসংলগ্ন কালীর হাট এলাকায় ঘটে এই নির্মম ঘটনাটি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা ঘাতক লুসাই পরিবহনের বাসটি আটক করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে।

নিহত ব্যক্তির নাম রেজাউল করিম রনি (৩৫)। তিনি স্থানীয় কালীর হাট এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবা আমেরিকাপ্রবাসী অলি উল্লাহ। রনির দেড় বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। আটক করা লুসাই পরিবহনের বাসটি নগরের ৪ নম্বর রুটে চলাচল করে। যার বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন নম্বর ‘চট্ট মেট্রো-জ-১১-১৮০৩’। বাস কম্পানির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১২১৫০।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবক মোহাম্মদ রাজু বলেন, পারিবারিক কাজে রেজাউল করিম রনি সীতাকুণ্ডের কুমিরা গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভাড়া নিয়ে বাসটির সহকারীর সঙ্গে বিতণ্ডা হয় তাঁর। একপর্যায়ে তাঁকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে পিষে বাসটি এগিয়ে নেয় চালক। এতে রনির মাথা থেঁতলে গেলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চালক ও সহকারী বাস রেখে পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মোহাম্মদ আমীর।

নিহত রেজাউল করিম রনির পক্ষে বাসটির মালিক-চালক-সহকারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে আকবর শাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘থানায় এখনো মামলা হয়নি। বাদিপক্ষ যেভাবে মামলার এজাহার দেবে সে ধারাতেই মামলাটি গ্রহণ করা হবে।’

লুসাই পরিবহন লিমিটেডের বাসটির মালিকের নাম বদিউল আলম মজুমদার। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘লুসাই পরিবহন আমাদের সমিতির সদস্য নয়। জয়েন্ট স্টক কম্পানিতে নিবন্ধন করে পুলিশকে ম্যানেজ করে শহরের বিভিন্ন রুটে অবৈধভাবে তারা যাত্রী পরিবহন করছে। তাদের অন্তত ৩০০ বাস নগরের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে।’

নির্মম এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ লোকজন চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে আকবর শাহ থানার পুলিশ ক্ষুব্ধ লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

আকবর শাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার জের ধরে বাসযাত্রীকে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জেনেছি। বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক-সহকারীকে আটকের চেষ্টা চলছে।’

পাঠকের মতামত: