ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লামায় ১০বাল্য বিবাহের রোধে সামাজিক সংগঠনের আবেদন

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ::

সম্প্রতি সময়ে বান্দরবানের লামায় ব্যাপক হারে বাল্য বিবাহ বেড়েছে। বয়স গোপন, জাল জন্ম নিবন্ধন, কাজীদের অসৎ সহযোগিতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমর্থনে এই বাল্য বিবাহ হয়ে আসছে বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়।

আগামী সপ্তাহ ও মাসের মধ্যে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে এমনি আরো ১০টি বাল্য বিবাহ সংগঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই বাল্য বিবাহ সমূহ রোধে আইনগত সহায়তা চেয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের “হায়দারনাশী শুভদিন সংগঠন” এর সভাপতি ওবাইদুল মন্নান। আবেদনের সাথে সম্প্রতি সংগঠিত হবে এমন ১০টি বাল্য বিবাহের মেয়েদের নাম ঠিকানা সংযুক্ত করা হয়েছে। আবেদনে উল্লেখিত ছেলে মেয়েদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। যাদের অধিকাংশরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্রী।

হায়দারনাশী শুভদিন সংগঠন এর সভাপতি ওবাইদুল মন্নান বলেন, আমরা বাল্য বিবাহের কূফল সমূহ মানুষকে বুঝিয়ে বাল্য বিবাহ রোধে কাজ করছি। কিন্তু তারপরেও প্রতিনিয়ত অসংখ্য বাল্য বিবাহ হয়ে যাচ্ছে। যার মূল কারণ পরিবারের অসচেতনতা এবং নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) এর বাণিজ্যিক মানসিকতা। আগামী সপ্তাহ ও মাসের মধ্যে আমাদের এলাকায় এমন ১০টি বাল্য বিবাহ হতে যাচ্ছে। সংবাদ পেয়ে বাল্য বিবাহ রোধে সকলের নাম পরিচয় তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট আবেদন করেছি। তিনি বাল্য বিবাহ বন্ধে পদক্ষেপ নিবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।

তিরি আরো বলেন, আগামী ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার অংশাঝিরি পাড়ার মো. সাহাব উদ্দিনের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী নাছিমা আক্তারের বিবাহ সম্পাদনের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ হায়দারনাশীর জিয়াবুল হক এর মেয়ে সোনিয়া আক্তার, নুুরুল গফুর এর মেয়ে জিয়াবুন নোপ, ছবুর এর মেয়ে কাউছার আক্তার, কাছেম আলীর মেয়ে উর্মি আক্তার, আব্বাস আলীর মেয়ে সোনিয়া আক্তার, হায়দারনাশী এলাকার আক্কাস আলীর মেয়ে তাহামিনা আক্তার, সেলিম এর মেয়ে রুমি আক্তার, দুলন ধর এর মেয়ে পূর্ণিমা দে, ডান হাতির ছড়ার আব্দু ছালাম এর মেয়ে তৈয়ম ও মধ্যম হায়দারনাশীর নুরুল ইসলাম এর মেয়ে বিলকিস আক্তার এর বিবাহের দিন সময় ধার্য্য হয়েছে। এই সব কয়টি মেয়ের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, এই ইউনিয়নে মোট ৫ জন নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) রয়েছেন। কাজী আব্দু রহমান তালিকা ভুক্ত নিকাহ রেজিস্টার। কিন্তু তার ছোট ভাই আবু বক্কর কাজী না হয়েও বিবাহ সম্পাদনের কাজ করেন। এছাড়া বগাইছড়ির গ্রাম্য ডাক্তার মো. জসিম উদ্দিন, পার্শ্ববর্তী ডুলহাজারা এলাকার মো. বেলাল ও ১নং রিপুজী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর আলী মাস্টার নিকাহ রেজিস্টারের কাজ করেন। এইসব কাজীদের কাছে অসংখ্য নিকাহ রেজিস্টারের বালাম বই রয়েছে। সরকারী নির্দিষ্ট নিকাহ রেজিস্টারে শুধু মাত্র বৈধ বিবাহ সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়। আর বাল্য বিবাহ, পালিয়ে করা বিবাহ সমূহ দুই নাম্বার রেজিস্টারে করানো হয়। এই সব বিবাহের খরচ নেয়া হয় বৈধ বিবাহের ৫/৭ গুণ বেশী। এক্ষেত্রে কনে ও বর পক্ষকে কোন বিবাহের নকল দেয়া হয়না। যার কারণে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে এবং মেয়েরা আইনগত বিচার পায়না। এছাড়া রোটারী পাবলিক এর মাধ্যমেও প্রচুর বাল্য বিবাহ সম্পাদন হয়। উল্লেখিত কাজীরা চুক্তিতে সেই কাজ গুলো করেন। একই চিত্র উপজেলার অন্য ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায়।

নিকাহ রেজিস্টার আব্দুর রহমান বলেন, অনেকে কাজী না হয়েও কিভাবে বিবাহ পড়ান তা আমি জানিনা। বেশ কিছু বাল্য বিবাহের খবর আমদের কানেও আসে।

পার্শ্ববর্তী ডুলহাজারা এলাকার হতে এসে বিবাহ পড়ান কাজী মো. বেলাল। এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, হায়দারনাশী শুভদিন সংগঠনের করা অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অফিসার ইনচার্জ লামা থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: