ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

১৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে ১০ টাকায় চামড়া বিক্রি

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

১০ বছর পর স্বজনদের সঙ্গে দেশে কোরবানি দিতে এসেছেন হালি শহরের ‘এ’ ব্লকের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। ঈদুল আজহার দিন বিকেলে তিনি দুটি খাসি কোরবানি দেন। তিনি বলেন, ‘চামড়া কিনতে সারা দিন কেউ আসেনি। তাই রাত ৯টায় একটি রিকশা নিয়ে দুটি মাদরাসায় যাই। মাদরাসা কর্তৃপক্ষও চামড়া নিতে রাজি হয়নি। পরে নয়াবাজারের মোড়ে চামড়া কিনতে আসা একটি পিকআপ দেখে তাদের অনেক অনুরোধ করার পর ১০ টাকা দরে দুটি খাসির চামড়া বিক্রি করতে সমর্থ হই।’ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘চামড়া বিক্রির টাকা হলো গরিবের হক। দুটি খাসির চামড়া বিক্রি করার জন্য আমি ঈদের দিন ১৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়েছি। চামড়া বিক্রির সেই ২০ টাকা ওই রিকশাচালককে দিয়ে দিয়েছি।’

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পিছু হটায় চট্টগ্রামে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন কোরবানিদাতারা। নগরের কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শহিদ বিন হোসাইন জানান, গরু কোরবানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল যুবক এসে বলে যায় ২০০ টাকা হলে তারা চামড়া কিনবে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় আর কাউকে চামড়া কিনতে আসতে দেখেননি শহিদ বিন হোসাইন। পরে গলির মুখে অবস্থান নেওয়া সেই যুবকদের কাছেই চামড়া বিক্রি করেন তিনি।

একই অবস্থা নগরের হালি শহর হাউজিং সোসাইটির ‘কে’ ও ‘এল’ ব্লক এলাকায়। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, ‘জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি। এবারই প্রথম কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে চামড়াটি বিনা মূল্যে দিয়ে দিলাম।’

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চট্টগ্রামে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দুষলেন চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতারা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করে। তারাই চামড়ার বাজার নষ্ট করেছে। সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারা সেই দাম মানেনি। ইচ্ছামতো দাম দিয়ে চামড়া নিচ্ছে তারা। তিনি আরো বলেন, তিন-চার স্তরের ব্যবসায়ীদের হাতবদল হয়ে একেকটি চামড়া আড়তে পৌঁছে। সেখানে প্রায় দুই মাস লবণজাত করে রাখার পর ট্যানারিতে সরবরাহ করা হয়। এখানে চামড়া আড়তদারদের কিছু করার নেই।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, গত তিন দিনে চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ চামড়া এসে পৌঁছেছে। আগামী ১০ দিনে গ্রামগঞ্জ, বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরো দেড় থেকে দুই লাখ কোরবানির পশুর চামড়া চট্টগ্রামের আড়তে পৌঁছবে। আড়তগুলোতে এখন চলছে এসব চামড়া সংরক্ষণের কাজ।

পাঠকের মতামত: